Advertisement
E-Paper

শীতের রাতেও ব্যাঙ্কে দীর্ঘ লাইন

টাকার জন্য রাত-দিন এক হয়ে গিয়েছে ফালাকাটার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের। দিনের বেলায় লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা না মিললে ঘুম, নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাতেও পরের দিনের জন্য ঠাঁয় দাঁড়িয়ে লাইনে গ্রাহকরা।

রাজকুমার মোদক

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২১
হাতে বিয়ের কার্ড নিয়ে রাতভর লাইনে। নিজস্ব চিত্র।

হাতে বিয়ের কার্ড নিয়ে রাতভর লাইনে। নিজস্ব চিত্র।

টাকার জন্য রাত-দিন এক হয়ে গিয়েছে ফালাকাটার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের। দিনের বেলায় লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা না মিললে ঘুম, নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাতেও পরের দিনের জন্য ঠাঁয় দাঁড়িয়ে লাইনে গ্রাহকরা। বুধবার রাতের পর, বৃহস্পতিবারও একই দৃশ্য। কেউ নাগাড়ে ২৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা পাবেন কি না, তার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। টাকা পেতে কম করেও ১৪-১৫ ঘন্টা নাগাড়ে হয়রানি হতে হচ্ছে। এমনকি বিয়ের খরচ করার জন্য হবু বরও ঘুমের সঙ্গে আপস না করে সন্ধ্যায় লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন পরের দিন ব্যাঙ্ক খোলার পর টাকা পাওয়ার আশায়।

ফালাকাটা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ঝাড়বেলতলি গ্রামের বাসিন্দা অনুপম দত্ত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি শীতের পোশাক ও কম্বল নিয়ে ব্যাঙ্কের সামনে নিজের বিয়ের চিঠি নিয়ে বসে পড়েন। সেনাবাহিনীতে (আইটিডিপি) চাকরি করেন তিনি। বিয়ের কার্ড দেখিয়ে বলেন, “নোট বাতিলের ঘোষণা শুনেই আমার মাথায় যেন বাজ পড়েছিল। বিয়ের জন্য সাত দিন আগেই ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি। আগামী সোমবার আমার বিয়ে। কী করে টাকা জোগাড় হবে, সেই চিন্তায় কয়েক দিন ধরে সকাল বেলা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখছি, টাকা পাওয়ার আগেই ব্যাঙ্কের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, অনেক আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। অনেক খরচ। তারপর বিয়ের কাপড়-চোপর, বিছানাপত্র, বিয়ের মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠান। টাকা না থাকলে এসব হবে কী ভাবে? তিনি বলেন, ‘‘আগে জানা গেলে বিয়ের তারিখ পিছিয়ে নিতাম। কিন্তু বিয়ের প্রাথমিক আচার অনুষ্ঠান হওয়ার পর তারিখ পিছনো সম্ভব নয়। আমি সেনা বাহিনীতে চাকরি করি। বেতনের সব টাকা অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। হাতে মাত্র কয়েক হাজার টাকা আছে।’’ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটাতেই তাই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর আশা, বিয়ের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা তোলার ঘোষণা যদি ব্যাঙ্ক কার্যকরী করে তাহলে হয়রানি থেকে কিছুটা বাঁচবেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারা দিন লাইনে থেকেও টাকা না পেয়ে বাড়ি চলে যাননি ফালাকাটার কলেজপাড়ার চন্দন সাহা বা প্রমোদনগর গ্রামের রাজু হোসেন। বৃহস্পতিবার লাইনে থাকতে থাকতে ব্যাঙ্কের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর, দোকান থেকে টিফিন খেয়ে এসে ফের সন্ধ্যা ছ’টায় শুক্রবারের জন্য লাইনে দাঁড়ান চন্দন বা রাজু হোসেনের মতো অনেকে। চন্দনবাবু জানান, “সারা দিন লাইনে থেকেও টাকা না পেয়ে ফের সন্ধ্যা ছ’টায় শুক্রবারের জন্য আমিই প্রথম গ্রাহক হিসাবে লাইনে দাঁড়াই। কারণ একটু বেশি রাতে লাইনে দাঁড়ালে পর দিন টাকা পেতে দুপুর গড়িয়ে যাবে। বাড়িতে ফোন করে বলেছি আমি ফের লাইনে দাঁড়িয়েছি। ফোনেই বাড়ি থেকে রাতের জন্য শীত পোশাক আনতে বলেছি। নিজের লাইনের জায়গা পিছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে রক্ষা করার দায়িত্ব দিয়ে হোটেলে খেয়ে এসেছি। আমি খেয়ে এলে পিছনের জন খেতে যায়। এভাবেই একে অপরের সহযোগিতা করে রাত কাটিয়েছি। বৃহস্পতিবার সংকল্প করেছি, টাকা লাগবেই। রাতকে ভয় করব না।”

এত কিছুর পরেও রাতের লাইন নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অভিযোগ। পিছনের দিকে থাকা কোন কোন গ্রাহক অভিযোগ করে বলছেন, কিছু গ্রাহক সত্যিই টাকার জন্য রাতে লাইন দিচ্ছেন। এছাড়া কিছু যুবক রাতে লাইন দিয়ে সকালে সুযোগ বুঝে লাইনে নিজের জায়গা দু’তিনশো টাকায় বিক্রি করছে।

Winter night ATM queue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy