নাবালিকা ‘প্রেমিকা’কে যৌন নির্যাতন এবং খুনের ঘটনায় ঘটনায় এক যুবককে দোষী সাব্যস্ত করল মালদা জেলা আদালত। মোট ১৩ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তিন বছর আগেকার ঘটনায় ‘প্রেমিক’কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানার করেন মালদহ জেলা আদালতের পকসো কোর্টের বিচারক রাজীব সাহা। ২ বছর বিচারপ্রক্রিয়া চলার পর সোমবার রায় ঘোষণা হয়। তবে মৃতার পরিবার জানিয়েছে, এই রায়ে তারা খুশি নয়।
সরকারি আইনজীবী অসিতবরণ বোস জানান, বছর তিনেক আগে এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করে খুনের অভিযোগ নিয়ে মালদহ থানায় গিয়েছিল পরিবার। তারা ওই এলাকার এক বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২১ জুন চার দিন নিখোঁজ থাকার পর পুরাতন মালদহের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর অর্ধনগ্ন এবং পচাগলা দেহ উদ্ধার হয় পুকুর থেকে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগ ছিল নাবালিকার সঙ্গে শামিম আক্তার নামে এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের কথা মেয়েটির পরিবার পরে জানতে পারে। তার মধ্যে নাবালিকার সঙ্গে যুবক একাধিক বার শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হন।
মেয়েটির বাবার অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার রাতে শামিম নাবালিকাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। শারীরিক অত্যাচার করে শ্বাসরোধ করে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটিকে খুন করেন তিনি। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, খুনের প্রমাণ লোপাট করতে মেয়েটির দেহে ইট বেঁধে তাকে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ১৬ বছরের ছাত্রীর ‘প্রেমিক’কে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ খুনের মোটিভ জানতে পারেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, ‘প্রেমিকা’র আরও কয়েক জনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, এই সন্দেহে তাকে খুন করে শামিম।
পুলিশের রিপোর্টে রয়েছে, নিহত ছাত্রীর কয়েক দিন ধরে হদিস মিলছিল না। পরে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রক্তের দাগ দেখতে পান স্থানীয় কয়েক জন। ঘটনাস্থলে গিয়েছিল পুরাতন মালদহ থানার পুলিশ। ঘটনাক্রমে ওই পরিত্যক্ত বাড়ির পাশে একটি পুকুরে দিনভর অভিযান চালিয়ে ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় ছাত্রীর অন্তর্বাস। পরিত্যক্ত বাড়িতে পাওয়া যায় কয়েকটি চিঠি। যেগুলি প্রেমপত্র বলে মনে করেন তদন্তকরীরা। ঘটনাক্রমে নিহত তরুণীর মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে শামিম তাকে ফোন করে ডেকেছিলেন। তার পর আর মেয়েটি বাড়ি ফেরেনি।
আরও পড়ুন:
অভিযুক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের সম্পর্ক ভাল ছিল। কিন্তু মেয়ে নিখোঁজের পর বাবা-মা শামিমকেই সন্দেহ করেন। ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে শামিম এবং তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় ১৩ জনের সাক্ষী নেওয়া হয়েছে। শেষমেশ শামিমকে খুন ও ধর্ষণের দায়ে শাস্তি দিয়েছে আদালত। তবে তাঁর বাবাকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। পকসো কোর্টের বিচারকের নির্দেশ, জরিমানার এক লক্ষ টাকা নাবালিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হবে।