প্রতি বছরেই এই সময়ে মাঝেমধ্যেই বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখা যায়। যার ব্যতিক্রম হয়নি এ বারও। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের একাধিক জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সামনে আসতে শুরু করেছে। এমন ঘটনায় যেমন জঙ্গলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তেমনই বন্যপ্রাণীরাও সমস্যায় পড়ে।
গত বছর জুন মাসে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ঐতিহ্যবাহী হলং বনবাংলোয় আগুনের ঘটনা এখনও আমাদের প্রত্যেকের মনেই টাটকা। তবে সেই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে প্রায় প্রতি বছরেই এই সময়ে বনাঞ্চলের নানা অংশে আগুনের ঘটনাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কারণ, এই সময়ে বনাঞ্চলে আগুনের সমস্যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
অথচ, যদি লক্ষ্য করা যায় দেখা যাবে, পশ্চিমবঙ্গে যত বনাঞ্চলে আগুনের ঘটনা ঘটে, তার অন্তত ৬০ শতাংশ উত্তরবঙ্গে। তার একাধিক কারণ রয়েছে। তার আগে বলে রাখা ভাল, উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল অত্যন্ত ঘন, এলাকাও বড়। এখানে প্রচুর গাছের সমারোহ রয়েছে। ফলে শাীতের পরে এই সময়ে এখানকার বনাঞ্চলে শুকনো পাতাও অনেক বেশি হয়।
এ বার আসা যাক বনাঞ্চলে আগুন লাগার কারণ প্রসঙ্গে। এই সময়ে বন দফতর নিজেই বিজ্ঞাননির্ভর আগুন নেভানোর সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে ছোট ছোট জায়গায় শুকনো পাতার স্তূপ নষ্ট করতে আগুন লাগায়। শুকনো পাতা আগুনে পুড়ে ছাই হলে সেখানে নতুন ঘাস জন্মায়। যা বনাঞ্চলের তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যভান্ডার তৈরি করে। প্রচুর লোক সঙ্গে নিয়ে বন দফতর অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে এই কাজ করে। ফলে সেই কাজ নিয়ে তেমন কোনও চিন্তা নেই।
কিন্তু, এর পাশাপাশি বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের আরও কিছু কারণ রয়েছে। এই সময়ে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষদের একাংশ পুজোপাঠ করেন। যারা জঙ্গলের ভিতরে নদীতে গিয়ে স্নান করার পাশাপাশি সেখানে ধূপকাঠি, মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালিয়ে আসেন। সেখান থেকেও কিন্তু বনাঞ্চলের শুকনো পাতায় আগুনের ঘটনা ঘটে।
বর্তমান সময়ে বনাঞ্চলে প্রচুর পর্যটকেরও সমাগম হয়। অনেক সময় পর্যটকদের একাংশকে দেখা যায়, জঙ্গলের ভিতরে জ্বলন্ত সিগারেট বা বিড়ির টুকরো ফেলছেন। সেখান থেকেও শুকনো পাতায় আগুন ধরে অনেকটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে বনাঞ্চল লাগোয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এখনও শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে ছোট ছোট বন্যপ্রাণী শিকার করেন। এই সময়ে তেমন প্রবণতা আচমকাই ভয়াবহ রূপ নিয়ে নিতে পারে।
তবে কারণ যা-ই হোক না কেন, সময় এসে গিয়েছে বন দফতরকে এ নিয়ে আরও বেশি সজাগ হওয়ার। যাতে বনাঞ্চলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা রোখা যায়। তা না হলে এক দিকে যেমন, জঙ্গল ধ্বংস হতে থাকবে, তেমনই বন্যপ্রাণীরাও আরও বেশি বিপন্ন হবে। যেটা কখনই কাম্য নয়।
সম্পাদক, ন্যাসগ্রুপ (পরিবেশপ্রেমী সংগঠন)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)