দফতরে কাজ শুরুর নিয়ম ১০টা থেকে ১০টা ১৫ মিনিটের মধ্যে। সেখানে কর্মীরা আসছেন ১১টার পর। কেউ কেউ সাড়ে এগারোটারও পরে। আবার কর্মীদের ছুটি সাড়ে ৫টায় হলেও, ৪টার পর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে চেয়ার। দফতরে কর্মীরা থাকলেও তাই কাজের গতি কমেছে। অভিযোগ এক দিনের কাজ সাত দিনে , সাত দিনের কাজ এক মাসে , এক মাসের কাজ করতে বছর ঘুরছে। কর্মসংস্কৃতির এমনই হাল মালবাজারের মহকুমাশাসকের দফতরের।
অভিযোগ, সামান্য কলমের খোঁচায় যে কাজ করে দেওয়া সম্ভব তার জন্যেও বেশ কিছুদিন ঘুরতে হয় মহকুমার বাসিন্দাদের। নাগরাকাটা, ক্রান্তি, গজলডোবা, মেটেলির মত মহকুমার দূরবর্তী এলাকা থেকে মহকুমাশাসকের দফতরে আসতেই এক ঘণ্টা কিংবা আরও বেশি সময় লেগে যায়, তারপর কাজ না হওয়ার হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের। কখনও কর্মীরা নানা বাহানায় তাদের ফিরিয়ে দেন, আবার কখনও চেয়ারে কর্মীদের দেখাই মেলে না।
মালবাজার মহকুমা শাসকের দফতরে স্থায়ী অস্থায়ী কর্মী মিলিয়ে মোট ২৭জন কর্মী রয়েছেন। এদের মধ্যে কুড়ি জনেরও বেশি কর্মী ৬০কিমি দূরের জেলা শহর জলপাইগুড়ি থেকে আসেন। অভিযোগ, বাইরে থেকে আসা এই কর্মীরা দফতরে যেমন দেরিতে ঢোকেন অন্যদিকে বেরিয়েও পড়েন চটপট। এর ফলে একদিকে যেমন কাজের গতি কমে যায় তেমনি সাধারণ মানুষের হয়রানিও বাড়ে। কিন্তু নজরদার হিসাবে বিভিন্ন আধিকারিক, এবং সবার ওপরে খোদ মহকুমা শাসক থাকলেও কর্মীদের ওপরে রাশ টানতে সকলেই ব্যর্থ বলে অভিযোগ নানা মহলের।
মহকুমাশাসকের দফতরে সই এর খাতা না রাখা থাকায় কাগজে কলমে সকলেই নির্দিষ্ট সরকারি সময় মেনেই সই করে চলেন। তাই লাল কালির দাগও পড়ে না কোথাও। কর্মীরা অবশ্য ডুয়ার্স এলাকায় সন্ধ্যার পর বাস পরিষেবা না মেলার যুক্তি দেখান। জঙ্গলাকীর্ণ পথ, রাস্তায় হাতি উঠে আসা এসব নানা কারণে সমস্যাও হয় বলে অনেকের দাবি। তবে সরকারি কর্মচারীকে তার দফতর থেকে ৮ কিলোমিটারের মধ্যেই বসবাস করার সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। এরপরেও কেউ যদি ৮ কিমির দূরের কোন এলাকা থেকে আসা যাওয়া করতে চান সেক্ষেত্রে তাকে আধিকারিকদের থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হয় কিন্তু মহকুমাশাসকের দফতর কেন কোন রাজ্য সরকারের দফতরেই এই নির্দেশিকার তোয়াক্কা করেন না কর্মচারীরা।
কর্মসংস্কৃতির এমন দশার জেরে তপশিলী জাতি , উপজাতি , অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিদের শংসাপত্র বিলি এবং নাগরিক শংসাপত্র বিলির কাজ শম্বুক গতিতে চলেছে। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় নাগরিক শংসাপত্র বিলির কাজও মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের তদন্তের কাজটুকু বাদ দিলে ৭ থেকে ১০ দিনে যে নাগরিক শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া যায় তার জন্যে ছ’ মাসেরও বেশি সময় লাগছে।
কেন এত দেরি? মহকুমাশাসকের দফতরেরই এক কর্মীর কথায়, ‘‘নাগরিক শংসাপত্রের আবেদন জমা হওয়ার পর, সেটি পুলিশ প্রশাসনেরও কাছে যায়। পুলিশের কাছেই মাসের পর মাস পরে থাকে বলেই দেরি।’’ কিন্তু নিউ খুনিয়া বনবস্তির এক কলেজ ছাত্রীর কথায় ‘‘গত ৭মাস আগে আবেদন করার পর অবশেষে নাগরিক শংসাপত্র মিলেছে। পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট গত চারমাস আগেই এসে গিয়েছিল কিন্তু তারপরেও এত সময় লেগেছে।’’
ক্রান্তি ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি পঞ্চানন রায়ের কথায়, ‘‘মহকুমা শাসকের দফতরে হয়রান হয়ে অনেক গ্রামবাসীই অভিযোগ করেন। রাজ্য সরকার কাজে জোয়ার আনলেও অনেক ক্ষেত্রেই কর্মীদের জন্যে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।’’ সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মিন্টু রায়ের কথায়, ‘‘স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরাই শংসাপত্রের খোঁজে দফতরে যায়। কিন্তু অহেতুক তাদের ঘোরানো হয়।’’ কংগ্রেসের চা শ্রমিক নেতা মেটেলি এলাকার বাসিন্দা মানিক শীল আদিবাসী চা শ্রমিকদেরও মহকুমাশাসকের দফতরে দু্র্ভোগের মুখে পড়তে হয় বলে জানালেন।
তৃণমূল এবং বাম মনোভাবাপন্ন দুই সংগঠনের স্থানীয় নেতারা অবশ্য কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন এর নেতা কমলেশ মাহাতো বলেন ‘‘আমাদের তরফ থেকে কখনই আমরা দেরিতে আসা , তাড়াতাড়ি দফতর ছাড়াকে সমর্থন করি না। তাই সংগঠনগত ভাবে আমরা এই মনোভাবের বিরুদ্ধে।’’ মালবাজার মহকুমা কো অর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রতন বড়ুয়া মহকুমা শাসকের দফতরেরই কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘সংগঠন গত ভাবে আমরা সময়ানুবর্তিতার পক্ষে। দেরিতে আসার সঙ্গে তাই সংগঠন কোনভাবেই যুক্ত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy