Advertisement
E-Paper

কেরল থেকে ফেরার অপেক্ষায় গ্রাম

সোমবার এর্নাকুলাম থেকে বললেন, ‘‘একসঙ্গে এলাকার ৪০ জন মিলে আছি। গত কয়েকদিন বিস্কুট ছাড়া কিছু খাইনি। রান্নার গ্যাস, কেরোসিন তেল নেই।’’

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০২
হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকায় উদয় পাসওয়ানের স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকায় উদয় পাসওয়ানের স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

কেমন আছেন? প্রশ্ন শুনেই ফোনের অন্য প্রান্তে কেঁদে ফেললেন কেরলে বন্যা বিপর্যয়ে আটক মর্তুজা আলম। সোমবার এর্নাকুলাম থেকে বললেন, ‘‘একসঙ্গে এলাকার ৪০ জন মিলে আছি। গত কয়েকদিন বিস্কুট ছাড়া কিছু খাইনি। রান্নার গ্যাস, কেরোসিন তেল নেই।’’

মর্তুজার বাড়ি মালদহের চাঁচলের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালপাড়া এলাকায়। মাসছয়েক আগে এর্নাকুলামে গিয়েছিলেন। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। রাত পোহালেই ইদ। টিকিটও কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু বন্যায় আটকে গিয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি। কয়েকদিন বাড়িতেও যোগাযোগ করতে পারেননি। এ দিন মোবাইল ফোনে কিছুটা চার্জ করতে পেরেছেন।

মর্তুজার খবর পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বিবি। স্বস্তি পেয়েছেন তাঁর সঙ্গী শ্রমিকদের পরিজনেরাও। কিন্তু চাঁচলের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়া থেকেও কেরলে গিয়ে আটক আরও প্রায় শ’দুয়েক শ্রমিক। যাঁদের সঙ্গে কয়েকদিন ধরেই পরিজনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা আর আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের পরিজনদের। যদিও মহকুমার কতজন শ্রমিক কেরলে আটকে রয়েছেন, সেই হিসেব প্রশাসনের কাছে নেই। কেননা, ব্লকগুলিতে হেল্প সেন্টার খোলা হলেও সেখানে শ্রমিকদের পরিজনেরা কেউ যোগাযোগ করেননি। বস্তুত, ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ থাকলেও তাঁদের নির্দিষ্ট ঠিকানা পরিজনদের বেশির ভাগই জানেন না বলেই এই সমস্যা, মনে করছে প্রশাসন।

চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক ইশে তামাং বলেন, ‘‘হেল্প সেন্টারগুলিতে এখনও কোনও শ্রমিকের পরিজনেরা যোগাযোগ করেননি। আমাদের তরফে সোশ্যাল মিডিয়া, পঞ্চায়েত-সহ নানা ভাবে কেরলে আটক শ্রমিকদের পরিজনদের যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। তেমন হলে যতটা সম্ভব সাহায্য করা যেত।’’

চাঁচলের চন্দ্রপাড়ার খানপুর, গোয়ালপাড়া, রামপুর, জানিপুর থেকে প্রায় শ’দেড়েক শ্রমিক মাস ছয়েক আগে কেরলে গিয়েছিলেন। প্রত্যেকেরই ইদে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কেউই ফেরেননি। বরং গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বেগ ও আশঙ্কা ছড়িয়েছে।

খানপুরের আনারুল হক, আসরাফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তার পরিজনেরা। ফোন বন্ধ। আনারুলের বাবা শেখ নেজামুদ্দিন বলেন, ‘‘ছেলেটা যে কোথায় কী ভাবে আছে কিছুই বুঝতে পারছি না!’’

একইরকম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন মালতীপুরের শ্রমিক সাজ্জাদ আলি, মামুদ আলি, ছোটন দাস, কমল রাজবংশী, হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকার বাপ্পা মণ্ডল, সুভাষ মালাকার, চাঁচলের খরবার জাহাঙ্গির আলম, সোহরাব আলি, রতুয়ার বৈকন্ঠপুরের আনসার আলম, শেখ নুরুলের পরিজনেরা।

খরবার রানিপুরের শ্রমিক জাহাঙ্গির আলমের বাবা আমিনুল হক বলেন, ছ’দিন আগে কোচি থেকে ছেলে ফোনে বলেছিল, ‘‘একটা টিলার উপরে ওরা কয়েকজন আছে। আর যোগাযোগ নেই। দুশ্চিন্তায় উৎসবই আমাদের মাটি হয়ে গেল।’’

Kerala Kerala flood কেরল Malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy