চলতি বছরে মালদহ জেলায় ১৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৪ জন ও এ মাসে এপর্যন্ত দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কেউই মারা যায়নি। এদিকে এ মাসে জেলা সদর ইংরেজবাজার শহরেও এক ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মেলায় নড়েচড়ে বসেছে পুরসভা। শহরের কোনও বাড়িতে কেউ জ্বরে আক্রান্ত রয়েছে কি না, তা জানতে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ে একটি নজরদারি কমিটিও গড়া হয়েছে। সচেতনতায় বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি ও শহর জুড়ে ছোট-বড় হোর্ডিংও ঝোলানো হয়েছে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার নিকাশি নালাগুলি নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় সেগুলি মশার আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। মশা মারতে কামান দাগা ও তেল ছড়ানোর কাজও অনিয়মিত।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই এ খবর জানা গিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ১৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৪, ফেব্রুয়ারি মাসে ১, এপ্রিল মাসে ৩, জুন মাসে ১, জুলাই মাসে ৪ ও চলতি মাসে ২ জন আক্রান্ত। এদের মধ্যে ইংরেজবাজার শহর ও কালিয়াচক ১ ব্লকে ৩ জন করে আক্রান্ত ও গাজোল, হবিবপুর, মানিকচক, পুরাতন মালদহ. রতুয়া ১ এবং কালিয়াচক ৩ ব্লকে ১ জন করে আক্রান্ত হয়েছে। ১২ জনের চিকিৎসা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই হয়েছে। বাকি তিন জন জেলার মানুষ হলেও তাদের কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ১৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেও কেউই মারা যায়নি। বর্তমানে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’জন আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে। এ দিকে মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত থেকে এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ৩২ জন ভরতি হয়েছেন। ফলে হাসপাতালের মেল ও ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে রোগীর চাপ আরও বেড়ে গিয়েছে। এক একটি বেডে ২-৩ জনের পাশাপাশি মেঝেতেও প্রচুর রোগীকে রেখে চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রতীপকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্তদের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে প্রতিটি রোগীরই রক্তের ম্যাক-এলাইজা পরীক্ষা করা হচ্ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত যে দুজনের চিকিৎসা চলছে, তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।’’
এ দিকে ইংরেজবাজার শহরের উমা রায় সরণি রোডের এক বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে পুরসভা। শনিবার পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটি কর্মশালাও করেছে তারা। পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘পুরসভার যে ৬৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে, তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাঁরা যেন শহরের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কি না তার খোঁজ নেন। কতদিন ধরে জ্বর, চিকিৎসা চলছে কি না, সবই তথ্য তুলে প্রতিদিন সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। ওই কাজ তদারকির জন্য একটি নজরদারি টিম গঠন করা হয়েছে।’’
ওয়ার্ডে ওয়ার্ড মশা মারার তেল ছড়ানো ও কামান দাগাও নিয়মিত চলছে বলে তিনি জানান। যদিও পুরসভার নির্দল কাউন্সিলর তথা ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘‘পুর এলাকায় মশা মারার তেল ছড়ানো ও কামান দাগা অনিয়মিত। বিশেষ করে বিরোধীদের ওয়ার্ডগুলিতে তা হয় না বললেই চলে। এ ছাড়া নিকাশি নালাও নিয়মিত পরিস্কার না হওয়ায় সেগুলিই মশার আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে।’’