উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
পাঁচ মাস আগে জলপাইগুড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই উদ্বোধন করেছিলেন জলপাইগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের। উদ্বোধনের হলেও, স্টেডিয়ামের দরজা তালাবন্ধই থাকে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, সেই তালার চাবি সরকারি আধিকারিকদের পরিবর্তে ঠিকাদারি সংস্থার জিম্মায়। এমনটা কেন হবে, তা নিয়ে মঙ্গলবার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন। প্রশাসনের একটি সূত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতেই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ইনডোর স্টেডিামের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি জলপাইগুড়ির ইন্ডোর স্টেডিয়ামটি ‘আর্ন্তজাতিক মানে’র বলেও প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার উত্তরকন্যায় জলপাইগুড়ি জেলার উন্নয়নের কাজকর্ম পর্যালোচনা করতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ছাড়াও বিভিন্ন দফতরের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। দ্রুত স্পোর্টস ভিলেজটির পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ক্রীড়া দফতরকে হস্তান্তর করে, খেলা শুরু করতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশের পরেই প্রশাসনিক মহলে নাড়াচড়া শুরু হয়ে যায়। এ দিন বিকেলে, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরকন্যা ছাড়ার পরেই, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, রাজ্যের ক্রীড়া সচিব রাজেশ পাণ্ডে, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার-সহ অন্য আধিকারিকরা বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর উত্তরকন্যা থেকে বেরোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করার পর থেকেই পরিচালনা নিয়ে নানা বির্তক তৈরি হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর স্টেডিয়ামটি তৈরি করেছে। উদ্বোধনের পরে স্টেডিয়ামটি সেই দফতরের হাতেই থাকে। তবে স্টেডিয়ামের চাবি ঠিকাদারি সংস্থার হাতেই রয়ে যায় বলে অভিযোগ। তার জেরে ক্রীড়াপ্রেমীদের পদে পদে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। একটি ক্রীড়া সংস্থা স্টেডিয়াম দেখতে গেলেও তালা খোলা হয়নি বলে অভিযোগ। গত ছ’মাসে শুধুমাত্র ২ দিনের একটি ব্যাটমিন্টন টুর্নামেন্ট ছাড়া অন্য কোনও খেলাও ইনডোরে হয়নি। তবে সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও প্রতিযোগীদের ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে অন্তত দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কানে সব অভিযোগই পৌঁছেছে বলে সূত্রের দাবি। এক প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, ‘‘ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কথা শুনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উদ্বোধন করে যাওয়ার পরেও স্টেডিয়ামের জরজা কেন তালাবন্ধ থাকবে?’’
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ির স্টেডিয়াম সবদিন খোলা থাকবে এবং খেলা চলবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর স্টেডিয়াম পরিচালনার জন্য জেলাশাসককে চেয়ারম্যান করে, সাংসদ, পুরসভার চেয়ারম্যান সহ অনান্যদের রেখে কমিটি গঠনের কথাও এ দিন বলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘স্টেডিয়ামের কিছু কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলি সেরে দ্রুত স্টেডিয়ামটি ক্রীড়া দফতরের হাতে দিয়ে দেব। নিয়মিত খেলাও শুরু হবে।’’ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকারও বলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সুষ্ঠুভাবে স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলা শুরু করা যায়, তার চেষ্টাই করা হচ্ছে।’’
এ দিকে, স্টেডিয়াম নির্মাণকারী সংস্থার তরফে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাতানূকুল যন্ত্র বসানোর জন্য একটি ঘরের চাবি আমাদের কাছে রয়েছে। বাকি সব চাবি দফতরকে দেওয়া হয়েছে। স্টেডিয়াম যাতে নোংরা না হয়ে যায়, তার জন্য তালাবন্ধ ছিল।’’ এতদিন পর্যন্ত রাজ্যের শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’য় মুখ্যমন্ত্রী সাধারণত একাধিক জেলাকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রথম শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলার জন্য পৃথক করে উত্তরকন্যায় বৈঠক হল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জেলার পুরভোটের ফল প্রকাশের পরে এই বৈঠকের আলাদা ‘বার্তা’ রয়েছে। জলপাইগুড়ি এবং মালবাজার দুই পুরসভাই এ বারের ভোটে তৃণমূলের হাতে এসেছে। জলপাইগুড়ির এক আগের পুরভোটগুলিতে তৃণমূলের প্রতীকে জেতা সর্বোচ্চ আসনের সংখ্যা ছিল ২। গত লোকসভা ভোটের পরে তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহন বসু সহ অন্য কংগ্রেস কাউন্সিলররার দলে যোগ দেওয়ায় বোর্ডও তৃণমূলের দখলে আসে। এ বারে শহরের ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি জিতেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, মালবাজার পুরসভাতেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। দুই ফলেই দলনেত্রী খুশি হয়েছেন বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি।
এ দিনের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল জলপাইগুড়ির বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহনবাবুকে। ছিলেন কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীও। ছিলেন সাংসদ বিজয় বর্মন সহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। জলপাইগুড়িকে নতুন ১০০টা বাস দেওয়া হচ্ছে। করলা নদী, পর্যটন সহ আরও নানা প্রকল্পের কথা বলেছি। সার্কিট বেঞ্চের জন্যও হাইকোর্টের নির্দেশমতো দ্রুত সব পদক্ষেপ করা হবে।’’
পর্যটকদের দুর্ভোগ কমাতে জঙ্গল সাফারির জন্য মূর্তিতে নতুন টিকিট কাউন্টার, চালসাকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন সার্কিট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের জলবদ্ধতা সমস্যা মেটাতে নতুন মাস্টার প্ল্যান তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ দিনের বৈঠকে জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিয়ে বয়ে যাওয়া করলা নদীর নাব্যতা ফেরানোর কাজও যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy