প্রতীকী ছবি।
রায়গঞ্জ থেকে কোচবিহার, পরের পর খুন আর অস্ত্র উদ্ধারে ত্রস্ত উত্তরবঙ্গ। ৪ জুলাই রায়গঞ্জের অশোকপল্লিতে খুন ঠিকাদার। চার দিন পরে চোপড়ায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু। পরদিন রায়গঞ্জের পুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে উদ্ধার একটি পাইপগান, সাত রাউন্ড কার্তুজ। গত মঙ্গলবার রায়গঞ্জে পূর্ব নেতাজিপল্লিতে যুবক গুলিবিদ্ধ। বুধবার কোচবিহারেও গুলি করে খুনের ঘটনা। কোথা থেকে আসছে এই আগ্নেয়াস্ত্র, কত সেগুলির দর, খোঁজ নিল আনন্দবাজার
দিশি খোকা চাই? দাম পড়বে ৭ হাজার টাকা। বড় খোকাকে নেবেন? সাড়ে ১২ হাজার টাকা তো লাগবেই। আছে ছোট খোকা, স্মার্ট বয়ও। উত্তরবঙ্গের অপরাধ দুনিয়ায় কান পাতলে এমন সব নামই শোনা যায়। যা কিনা আগ্নেয়াস্ত্রের ডাক নাম। অপরাধ জগতে আদর করে ওই নামে ডাকা হয় পাইপগান, পিস্তল, সেমি অটোমেটিক রিভলভারকে।
বিহার লাগোয়া রায়গঞ্জ দিয়ে শুরু করা যাক। বিহারের মুঙ্গের ও লাগোয়া এলাকা থেকে কখনও বাসে, আবার কখনও ট্রেনে। জাতীয় সড়ক বা রেল স্টেশনে পুলিশের কড়া নজরদারির খবর মিললে দ্রুত বাস পাল্টে মোটরবাইকে মেঠো পথে শুরু হয় কারবার। দীর্ঘদিন ধরে এ ভাবেই লাগোয়া বিহারের পূর্নিয়া ও কিষাণগঞ্জ থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ ঢুকছে বলে অভিযোগ।
গত এক সপ্তাহে চোপড়া ও রায়গঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জন খুন, এক জন জখম হয়েছেন। আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তিন যুবক গ্রেফতার হয়েছে। তদন্তে নেমে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে পুলিশ। ধৃতদের জেরায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও মিলেছে। তাতেই পুলিশের ঘুম ছুটে গিয়েছে।
রায়গঞ্জের জাতীয় সড় লাগোয়া ধাবার অদূরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন ট্রাকচালক জানান, মুঙ্গের থেকে ছোট প্যাকেট নানা এলাকায় পৌঁছে দিতে পারলে মোটা আয়ের হাতছানি। সেই ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে অস্ত্র পাচারে জড়িয়ে জেলেও গিয়েছেন বলে তাঁরা জানান। এক আইনজীবী জানান, অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, ক্যুরিয়রের কাজ করার টোপ দিয়ে বিহার থেকে অস্ত্র পাঠানো হয়েছে। রাস্তায় ধরা পড়ে সেই যুবককে বহু দিন জেল খাটতে হয়েছে।
বিহারগামী বাসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরাও ‘খোকা, বড় খোকা, স্মার্ট বয়’-এর মতো শব্দগুলি মাঝেমধ্যে বিহারের বাস স্ট্যান্ডে শুনেছেন। যেমন বাসের এক খালাসি জানান, একদিন বিহারের কয়েক জন জোর করে তাঁর গাড়ির ডিকিতে একটা প্যাকেট ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শিলিগুড়ি মোড়ে লাল বাইক নিয়ে লাল টি শার্ট পরা এক যুবকের হাতে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সন্দেহ হওয়ায় ওই খালাসি রাজি হননি। ঘটনাচক্রে, বিহারের অন্য এক বাসে তা আনার সময়ে পুলিশ সেটা উদ্ধার করেছিল। ‘মাল কার, জানি না’— এ কথা বলার পরেও সেই বাসের খালাসিকে দু’দিন ধরে জেরা করে পুলিশ। চেহারা-ছবির বিবরণ দেখে মুঙ্গেরের সেই পাচারকারীকে পুলিশ চিনতে পারে। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy