Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
English Bazar

পুলিশ লাইনে পুলিশ ‘সেজে’ গয়না চুরি

অভিযোগ, পুলিশের উর্দি পরে চেকিংয়ের নামে মহিলার সোনার অলঙ্কার কেপমারি করে পালায় তিন যুবক। পুরো ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে শহরের নিরাপত্তা নিয়েই।

শ্যামলী দাস। নিজস্ব চিত্র

শ্যামলী দাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫০
Share: Save:

মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্যামলী দাস। পথে তাঁর টোটো আটকায় পুলিশের উর্দিধারী দুই যুবক। বলে, ‘চেকিং চলছে, গয়না খুলুন।’ প্রথমে রাজি না হলেও, তখনই সেখানে একটি যুবক এসে নিজের গলার চেন খুলে ওই উর্দিধারীদের দিয়ে দেয়। এর পরই শ্যামলীও তা করেন। পরে কাগজে মুড়ে শ্যামলীকে গয়না ফেরতও দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি ফিরেই মাথায় হাত, তিনি দেখেন সোনার চেন ও দু’টি চুড়ির জায়গায় রয়েছে প্লাস্টিকের চুড়ি।

মঙ্গলবার সকালে এ ভাবেই কেপমারির অভিযোগ উঠল মালদহের ইংরেজবাজার শহরের পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকায়। অভিযোগ, পুলিশের উর্দি পরে চেকিংয়ের নামে মহিলার সোনার অলঙ্কার কেপমারি করে পালায় তিন যুবক। পুরো ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে শহরের নিরাপত্তা নিয়েই। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।

ইংরেজবাজার শহরের গৌড় রোড এলাকার বাসিন্দা শ্যামলী দাস। তাঁর স্বামী বিমলকৃষ্ণ অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। তাঁদের মেয়ে জলি ইংরেজবাজার শহরের পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকার একটি আবাসনে থাকেন। পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ টোটোয় মেয়ের কাছে যাচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্যামলী। সেই আবাসনের সামনে পুলিশ লাইনের পাশেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার রয়েছে। পুলিশ জানায়, কাউন্টারের সামনেই পুলিশের উর্দিধারী দুই যুবক শ্যামলীর টোটো থামায় বলে অভিযোগ। শ্যামলী জানান, তাঁকে বলা হয় চেকিং চলছে। তাই তাঁর সোনার অলঙ্কার খুলে কাগজে মুড়ে নিতে হবে। মহিলা আপত্তি করতেই আচমকা আরেক যুবক ঘটনাস্থলে হাজির হন। তারপরেই ওই যুবক নিজের গলার একটি চেন খুলে উর্দিধারী যুবকদের হাতে দিয়ে দেয় বলে দাবি শ্যামলীর। তিনিও তখন তাঁর সোনার চেন এবং হাতের দু’টি চুড়ি খুলে ওই উর্দধারীদের দিয়ে দেন। এরপরেই ওই দুই যুবক অলঙ্কারগুলি কাগজে মুড়িয়ে ফেরত দেয়। আর মহিলা বাড়িতে গিয়ে দেখেন কাগজে জড়ানো রয়েছে প্লাস্টিকের দু’টি চুড়ি।

কিন্তু তিনি কাগজটি দেখে নিলেন না কেন, উত্তরে শ্যামলী বলেন, ‘‘একেই উর্দি পরে ছিল, আবার পুলিশ লাইন এলাকা। তাই সন্দেহ হয়নি।’’

এরপর ওই মহিলা ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ লাইনে সব সময়ই পুলিশ থাকে। আর দুই যুবক পুলিশের পোশাকেই ছিল। তারপরে আরও এক যুবক ওখানে আসে। পুলিশের পোশাকে কেউ এ ভাবে কেপমারি করবে, ভাবতেও পারিনি।” অবাক মহিলার আত্মীয়-স্বজনেরাও। মহিলার ছেলে শোভন দাস বলেন, ‘‘মা তো এই সময়ই দিদির বাড়িতে যান। এ দিনও গিয়েছিলেন। তবে পুলিশ লাইনের সামনেই এ রকম কাণ্ড হল, ভাবতেই অবাক লাগছে।’’

পুলিশের অনুমান, পুরো ঘটনায় একটি চক্র যুক্ত রয়েছে। তারা জানায়, প্রাথমিক অনুমান ওই মহিলার গতিবিধির উপরে আগে থেকেই নজরদারি চালিয়ে এ ভাবে ছিনতাই করা হল। অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘চেকিংয়ের সময় কখনও সোনার অলঙ্কার খুলে নেওয়া হয় না। মানুষকে সচেতন হতে হবে। তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

English Bazar Theft Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE