Advertisement
E-Paper

নিয়ম ভেঙে গাদাগাদি করে যাত্রা মাতৃযানে

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী যাওয়ার কথা একজনের। অথচ মাতৃযানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুজন বা তার চেয়েও বেশি মা এবং শিশুদের। একই গাড়িতে একাধিক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হলেও বিল করা হচ্ছে আলাদা।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০২:০০
এ ভাবেই যেতে হয় মাতৃযানে। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই যেতে হয় মাতৃযানে। —নিজস্ব চিত্র।

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী যাওয়ার কথা একজনের। অথচ মাতৃযানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুজন বা তার চেয়েও বেশি মা এবং শিশুদের। একই গাড়িতে একাধিক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হলেও বিল করা হচ্ছে আলাদা। মাতৃযানের নিয়ন্ত্রক সরকারি কর্মীদের জন্য এই ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে সরব হয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। মাতৃযানের চালকেরা অবশ্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাতৃযান না থাকাতেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।

গত বছর ৯ মে স্বাস্থ্য দফতরের সভায় সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া একজন মা ও তাঁর সন্তানের জন্য একটিমাত্র যান ব্যবহার করতে হবে। এই নিয়ম কঠোরভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্যরকম। এখানে একটি যানকে দুই বা ততোধিক এ রকম রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে থাকেন রোগীর আত্মীয়স্বজনেরাও। একটি গাড়িতে গাদাগাদি করে সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়।

কেন এরকম হয়? জলপাইগুড়ি অ্যাম্বুল্যান্স চালক অ্যাসোসিয়েশন সুত্রে জানা যায় যে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ৪০টি গাড়ি থাকলেও মাতৃযানের কাজে ব্যবহার হয় মাত্র ১৭টি গাড়ি। এই গাড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রন করেন মাতৃযানের একজন নোডাল অফিসার।

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের রোগী সহায়ক কেন্দ্র থেকে মাতৃযানের নোডাল অফিসারের কাছে কতজন রোগী আছে এবং কতগুলি গাড়ির দরকার আছে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। তার নির্দেশেই চালকেরা গাড়ি ব্যবহার করেন। জলপাইগুড়ি অ্যাম্বুল্যান্স চালক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীলিপ দাস বলেন, “আমাদের কাছে যেমন নির্দেশ আসে, তেমন ভাবেই আমরা গাড়ি ব্যবহার করি।”

চালকদের সংগঠন সুত্রে জানা যায়, ১৭ জন বা তার কম রোগী ছাড়া হলে একটি গাড়িতে একজনই যেতে পারেন কিন্তু ৪০ জনের ওপর রোগীকে ছাড়া হলেই সমস্যা দেখা দেয়। তখন একটি গাড়িতে একাধিক রোগীকে নিয়ে যেতে বলা হয়। তখন একই রুটে কোন কোন রোগী যাবেন তা জেনে নিয়ে তাঁদের একটি গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন এটাই রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

যদিও পরিজনদের অভিযোগ, একই গাড়িতে নিয়ে গেলেও প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদাভাবে গাড়ির বিল করা হয়। চালকেরা জানিয়েছেন যে তাদের প্রতি কিলোমিটার ৮ টাকা হিসেবে বিল দেওয়া হয়। এই টাকা কম। পোষায় না। বাধ্য হয়ে একাধিক রোগীকে নিতে হয়। ময়নাগুড়িতে দুজন রোগী নিয়ে গেলে তাদের জন্য দুটি আলাদা বিল করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের ক্ষোভ, ‘‘সুপারের অফিস থেকে সব জেনে বুঝেও আলাদা বিল পাশ করে দেওয়া হয়।’’ জলপাইগুড়ির ওই সংগঠনের সম্পাদক অনীক মুন্সি বলেন, “সরকারি টাকার নয়ছয় হচ্ছে। একই গাড়িতে নিয়ে গেলেও আলাদা গাড়ির বিল করা হচ্ছে। আরও অনেক বেশি অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে না। রোগীরা বাড়ি যাওয়ার সময় ভোগান্তির একশেষ হচ্ছেন। আমরা আগে সুপারকে বলেছিলাম। তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি।” ক্ষোভ রয়েছে চালকদেরও। অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁরা সকলেই মাতৃযানের জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। পরে অধিকাংশই সরে আসেন। কারণ মাতৃযানের বিল পেতে পেতে পাঁচ মাসের বেশি সময় লেগে যায়। এখন ২৩ জন নাম তুলে নিয়েছেন। মাত্র ১৭টি অ্যাম্বুল্যান্স এখন মাতৃযানে ব্যবহার হচ্ছে।

সরকারি নির্দেশ অনুসারে সদ্যোজাত থেকে এক বছর বয়সী শিশুরা ও প্রসূতিরা মাতৃযানের সুবিধা পেয়ে থাকেন। হাসপাতালে যোগাযোগ করলে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য, হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য ও চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার করলে এই সুবিধা তাঁদের পাওয়ার কথা। মাতৃযানের নোডাল অফিসারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “যা বলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলবেন।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারীক প্রকাশ মৃধা বলেন, “নিয়মানুসারে একটি যানে একজন রোগীর যাওয়া উচিত। তা সত্ত্বেও এ রকম ঘটনা কেন ঘটছে তা দেখতে হবে। অন্য বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হবে।”

raja bandopadhyay jalpaiguri government ambulance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy