Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধূপগুড়িতে বিজেপি কর্মীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য

বিজেপি-র এক কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ডুয়ার্সের ধূপগুড়ি শহরের বাসিন্দা ভবতোষ সরকার (৫৩) নামে ওই বিজেপি কর্মী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহর থেকে ন’কিলোমিটার দূরে খট্টিমারি জঙ্গলে তাঁর দেহ মেলে। এলাকায় সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত ভবতোষবাবু পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

ভবতোষ সরকারের শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: রাজকুমার মোদক। (ইনসেটে) নিহত ভবতোষ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

ভবতোষ সরকারের শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: রাজকুমার মোদক। (ইনসেটে) নিহত ভবতোষ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৯
Share: Save:

বিজেপি-র এক কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ডুয়ার্সের ধূপগুড়ি শহরের বাসিন্দা ভবতোষ সরকার (৫৩) নামে ওই বিজেপি কর্মী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহর থেকে ন’কিলোমিটার দূরে খট্টিমারি জঙ্গলে তাঁর দেহ মেলে। এলাকায় সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত ভবতোষবাবু পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মৃতের ভাই। বানারহাট থানায় বিনোদ সাহা, অভিজিত্‍ পাল, দুলাল পাল ও নাইজু প্রসাদ নামে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ওই চার অভিযুক্তই তৃণমূল কর্মী বলে বিজেপি-র দাবি। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গুড্ডু সিংহ বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও মৃত্যু নিয়ে রাজনীতির পক্ষপাতী নই। আমরা চাই পুলিশ যথাযথ তদন্ত করুক। খুন হলে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করুক। ’’

মাস পাঁচেক আগে অভিযুক্তদের সঙ্গে ধূপগুড়ি শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভবতোষবাবুর জমি নিয়ে বিবাদ হয় বলে জানা গিয়েছে। সে সময় তাঁরা ভবতোষবাবুকে ব্যাপক মারধর করেন বলে অভিযোগ। তখন ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতারা। সেই সময় তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুরের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। এর বাইরে এ মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ স্থানীয় মানুষের দাবি, এদিন বিকেলে স্থানীয় শ্মশানে ভবতোষ বাবুর শেষকৃত্যের সময়ে অন্যতম অভিযুক্ত বিনোদ সাহাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে।

বিজেপি-র যুব মোর্চার ব্লক সভাপতি আশিস দেবনাথ বলেছেন, ‘‘ভবতোষবাবুর নেতৃত্বে চারটি ওয়ার্ডে আমাদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছিল। সে জন্য আগেও একবার তাঁর উপর হামলা চালায় তৃণমূল। এবার তাঁদের লোকজন তাঁর মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। এই হত্যার ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে আমরা বড় ধরনের আন্দোলনে নামব।’’

তবে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছেন, ভবতোষবাবুর শরীরে কোনও রকম আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। শুধু মাত্র মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। ব্যবসার কারণে তিনি জঙ্গলে গিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলেও মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ব্যবসা করতে গিয়ে প্রচুর টাকা ঋণের বোঝা ছিল তাঁর ঘাড়ে। সে কারণে হয়তো আত্মহত্যা করতে পারেন। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তবে তাঁর ভাইয়ের দাবি, আত্মহত্যা করেননি ভবতোষবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দাদাকে যারা খুন করেছে তারা সকলে এলাকার বাসিন্দা। আমি চাই তাদের গ্রেফতার করুক পুলিশ।’’ ভবতোষবাবুর দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। এক ছেলে ও মেয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট মেয়ে মাধ্যমিক দিয়েছে। তাঁর উপার্জনেই সংসার চলত। স্বামীর মৃত্যুতে বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ললিতাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারে না। পুলিশ ভাল ভাবে তদন্ত করলে দোষীরা শাস্তি পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE