প্লাস্টিক রুখতে জনশুনানিতে অনিমেষ বসু। —ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি আছে শিলিগুড়িতেই। অন্তত, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের প্রশ্নে। ব্যবসায়ীদের একাংশ মরিয়া চেষ্টা করলেও শহরের সিংহভাগ বাসিন্দা যে কোনও মতেই আর শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালু করাতে দেবেন না সেটা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সদস্যরা শুধু নন, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের দূষণ রুখতে সোচ্চার তাতে অনেকটাই আশ্বস্ত পুলিশ-প্রশাসন। এমনকী, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে কয়েক জন কর্তা স্বীকার করেছেন, শহরের ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রোধে সামিলে হয়েছে তা দৃষ্টান্তমূলক। শিলিগুড়ির পুরসভার কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়াও অনেকটা নিশ্চিন্ত। তিনি বলছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে দূষণ রোধে সরব হয়েছে তা দারুণ ব্যাপার। এতে পুরসভার পক্ষে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুরি বর্জন করানোর কাজে অনেক সুবিধে হবে।’’
এখন আশার আলো দেখলেও গত ২ বছর ধরে ক্রমশই যেন হতাশায় ডুবছিলেন শিলিগুড়ির পরিবেশ সচেতন বাসিন্দারা। কারণ, ব্যবসায়ীদের একাংশ গোড়ায় লুকিয়ে-চুরিয়ে, পরে খোলামেলা ভাবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছিলেন। শহরবাসীদের অনেকে তা নিতে আপত্তি করলেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন ব্যবসায়ীদের কয়েক জন। তা নিয়ে একাধিক বার নানা হাটে-বাজারে গোলমালও হয়েছে। যে কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (সাফাই)-এর উদ্যোগে শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের সূচনা হয়, সেই সুজয় ঘটক পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে জনশুনানিতে শহরবাসীর সরব হওয়া দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সুজয়বাবুও। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে আমরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের দূষণ সম্পর্কে সচেতন করার উপরে জোর দিয়েছিলাম। এখন ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে তাতে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমেছে।’’
তবে আত্মসন্তুষ্টির কোনও অবকাশ নেই বলে মনে করেন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু। তিনি বলেন, ‘‘জনশুনানিতে অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। শিলিগুড়ির বেশির ভাগ বাসিন্দা যে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে রাজি নন তা বোঝা গিয়েছে। কিন্তু, মুষ্টিমেয় কয়েক জন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের আগে আরও অনেক কিছু বন্ধের জন্য যুক্তি দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেটা পুরোপুরি বর্জন করার পরে আরও অনেক পদক্ষেপ করা সম্ভব। রাতারাতি সব হয়ে যাবে বলে ভাবা ঠিক নয়।’’
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক তথা সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন দেবব্রত মিত্র জানান, সিকিমের মানুষ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগকে সযত্নে সরিয়ে রেখেছে। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা কাউকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে দেখলে আপত্তি জানায়। দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘সিকিম যে কাজটা করছে, সেটা শিলিগুড়িও করে দেখিয়েছে। মাঝখানে লুকিয়ে-চুরিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চলছিল। ইদানীং কয়েকটি এলাকায় খোলাখুলি চলছে। সচেতন শহরবাসীরা তা বয়কট করলে ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেওয়ার সাহস পাবেন না। তা ছাড়া, আমাদের শিলিগুড়ির ছেলেমেয়েরাও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশ সচেতন। এটা অবশ্যই একটা শহরের পক্ষে আশার কথা।’’
তাই আড়ালে-আবডালে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতাদের একাংশ প্রভাবশালী নেতা-কর্তাদের কাছে গিয়ে নানা যুক্তি দিলেও শহরের আমজনতার মনোভাব বুঝে সকলেই মেপে পা ফেলছেন। এমনকী, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিংহভাগ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের পক্ষে প্রকাশ্যে মত প্রকাশ করছেন।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy