মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে এক বছরের বেশি সময়। পরিচয় পত্র তৈরির জন্য ১৪ শতাংশ শিল্পীর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না হওয়ায় আটকে রয়েছে কোচবিহারের সমস্ত লোকশিল্পীদের পরিচয় পত্র দেওয়ার কাজ। ফলে ভাতাও মিলছে না বলে দাবি ওই লোকশিল্পীদের। বাধ্য হয়ে দিনমজুরির উপরেই ভরসা করে দিন গুজরান করতে হচ্ছে তাঁদের।
লোকশিল্পীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কোনও অর্থ ছিল না। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, লোকশিল্পীরা প্রয়োজনীয় তথ্য জমা না দেওয়ায় নতুন করে ভাতা ও পরিচয় পত্র দেওয়ার কাজ শুরু করা যায়নি। কোচবিহার জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক ভাস্করজ্যোতি বেরা বলেন, “লোকশিল্পীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৪৭০ জনকে পরিচয় ও ভাতা দেওয়া হবে। এখনও ৭০ জনের মতো তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য অফিসে জমা দেননি। যার জন্য কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। আশা করছি জুন মাসের মধ্যে আমরা পরিচয় পত্র ও ভাতা দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারব।” তিনি জানান, শিল্পীরা যে সময় আবেদন করেছেন সেই সময় হিসেবেই তাঁদের প্রাপ্য দেওয়া হবে।
লোকশিল্পীরা ভাতা না পাওয়ায় সরব হয়েছেন একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তেমনই এক সংস্থার সঙ্গে জড়িত মৃন্ময় ঘোষ বলেন, “অন্য জেলাগুলিতে লোকশিল্পীরা ভাতা পেতে শুরু করেছেন। সেখানে কোচবিহার পারছে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখে কাজ সম্পূর্ণ করা উচিত।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহারে কয়েক হাজার লোকশিল্লী রয়েছেন। মাস ছয়েক আগে ওই শিল্পীদের নাম নথিভুক্তির জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফ থেকে শিবির করা হয়। ওই শিবিরে প্রায় আড়াই হাজার শিল্পী নাম নথিভুক্ত করেন। প্রথম দফায় ওই শিল্পীদের মধ্যে ৪৭০ জনকে পরিচয় পত্র ও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে সেই হিসেবে ওই শিল্পীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হয়। দফতর থেকে জানানো হয়েছে, পরিচয় পত্র ও ভাতা দেওয়ার আগে শিল্পীদের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ নানা তথ্য প্রয়োজন হয়। ওই তথ্য এখনও সম্পূর্ণ সংগ্রহ করে উঠতে পারেনি দফতর। দফতর থেকে জানানো হয়েছে, শিল্পীদের কাছে ওই সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে একাধিক বার আবেদন করা হলেও প্রায় ৭০ জন শিল্পী এখনও সেই সমস্ত তথ্য দিতে পারেননি। ফলে কাজ আটকে গিয়েছে।
জেলার ২১৩ জন শিল্পীর আগে থেকেই পরিচয় পত্র রয়েছে। ওই শিল্পীদের ২০১৩-১৪ সালের ভাতা মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু ২০১৪-১৫ সালের ভাতা এখনও তাঁরা হাতে পাননি। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৩-১৪ সালে চেকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া যেত। গত আর্থিক বছর থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। ওই শিল্পীরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা না দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, লোকশিল্পীদের জন্য মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা। এ ছাড়াও একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিলে এক হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা তাঁদের। লোকশিল্পী আব্দুল হামিদ বলেন, “গান করে সংসার চালাই। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের এমন কোনও মন্ত্রী নেই যাঁর সভায় আমি গান গাইনি। সরকার ভাতা দেবে শুনে নাম নথিভুক্ত করেছি, পরিচয়পত্র সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুই পাইনি। আধপেটা খেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি।’’ এই অবস্থায় শিল্পীরা সকলেই প্রশাসনের তৎপরতার দিকে চেয়ে দিন গুনছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy