চিকিৎসার খরচ চালানোর উপায় খুঁজে না পেয়ে সরাসরি জেলাশাসকের অফিসে চিঠি লিখে ‘স্বেচ্ছামৃত্যুর’ আর্জি জানিয়েছেন মালদহের ইংরেজবাজারের এক যুবক।
মহদিপুরের এ.কে. গোপালন কলোনির বাসিন্দা সুমন দাসের চিঠি জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদীর অফিসে পৌঁছেছে গত ৪ জানুয়ারি। শনিবার ওই চিঠির প্রতিলিপি সংবাদ মাধ্যমের হাতে তুলে দেন সুমনের পড়শিরা। এরপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
তাঁর বিধানসভা এলাকার যুবক স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়েছেন শুনে অস্বস্তিতে পড়েন বিধায়ক তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীও। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনাটি আমার নজরে আসেনি। ওঁর চিকিৎসার জন্য টাকার অভাব হবে না। ওঁর পরিবার আবেদন করলে সরকারি তহবিল থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাবে। তাতে না কুলোলে পরে দেখা যাবে।’’
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিডিও অফিস ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরকে টিম পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালদহের অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ব্লকের প্রতিনিধি দলকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সব কিছু করানো হবে।’’ নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের তৎপরতার কথা পৌঁছনোয় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন সুমনের মা আলোদেবী। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি পরিচারিকার কাজ করে ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে বড় করেছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে সুমন ক্লাস নাইনে পড়াশোনা ছেড়ে রোজগারে নামে। ট্রাকের খালাসি হিসেবে কাজ করতেন। ১০ অক্টোবর চাঁচলে ট্রাক থেকে নামানোর সময় একটি বস্তা পিঠে পড়ে সুমনের শিরদাঁড়া ভেঙে যায়। প্রথমে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সেখান থেকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়।
কিন্তু, পড়শিরা চাঁদা তুলে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জোগাড় করে সুমনকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যান। সেখানে অস্ত্রোপচারের পরে ‘ফিজিওথেরাপি’ করানোর পরামর্শ দিয়ে ছুটি দেওয়া হয়। নভেম্বরের গোড়ায় মালদহে ফেরার পরে আর কোনও চিকিৎসা করানো যায়নি তাঁর। ইতিমধ্যে সংসারের অভাবের কথা ভেবে সুমনের ছোট ভাই ছত্তিশগড়ে শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। তাঁর আগাম নেওয়া টাকায় কোনওমতে সংসার চলছে। কারণ, আলোদেবী এখন রাতদিন ছেলেকে দেখাশোনা করেন।
সুমনের শিরদাঁড়া ঠিক হলেও শিরায় রক্তপ্রবাহ ঠিক না থাকায় তিনি নিজে উঠে বসতে পারেন না। পা নাড়াতে পারেন না। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন,‘‘ভাল ফিজিওথেরাপি হলে এমন রোগীর ভাল হওয়া সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ।’’ আলোদেবী বলেন, ‘‘চোখের সামনে ছেলেটা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। দেখতে পারি না। দিনরাত খালি বলে আমাকে মেরে ফেলো। না হলে সকলে মরবে। এদিকে টাকাও জোগাড় করতে পারছি না।’’
সুমনের কথায় ‘‘এভাবে বাঁচা যায় না। যদি সুস্থ হওয়ার কোনও উপায় খুঁজে না পাই তা হলে আমাকে মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক। পাড়া-পড়শির সঙ্গে কথা বলে সেই আবেদনই জানিয়েছি। যে ভাবে হোক মরে যাব। তা হলে মা কাজ করতে পারবে। ভাইটা অন্য রাজ্য থেকে ফিরে এখানে থাকতে পারবে।’’
একসময়ে মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সরোজিনী রায়ও কিছুটা আর্থিক সাহায্য করেছেন সুমনকে। কিন্তু, পরে আর খোঁজ নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষমতা তো সীমিত। দেখি জেলা পর্যায়ে কিছু ব্যবস্থা হয় কি না।’’