বন্ধ রায়পুর চা বাগানের জঙ্গলে ঘেরা কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।
অবাধে বাড়তে থাকা ঝোপের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া চা বাগানের কারখানা। দিনভর ঘুঘুপাখির ডাক। রায়পুরে। এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোও হল না জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বন্ধ এই বাগানে। এক সময় রমরমিয়ে চলা রায়পুর চা বাগান বন্ধ হয়েছিল বাম আমলে। ২০০৩ সালে বন্ধের পরে, কয়েক দফায় কিছু সময়ের জন্য বাগান খুলেছে। তবে মালিকানা নিয়ে সমস্যা মেটেনি। ২০১৮ সালে বাগান ফের বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে আর খোলেনি। কারখানা বন্ধ থাকতে থাকতে পরিত্যক্তও। তবু প্রতি বছর বন্ধ কারখানার পাশে পুজোর বেদিতে বিশ্বকর্মা অর্চনার আয়োজন হত। গত বছরও একটি আলো জ্বালিয়ে ছোট প্রতিমা এনে পুজো হয়েছে। এ বছর পুজোয় সে আলো জ্বলল না বন্ধ চা কারখানার আশেপাশে।
বাগানের শ্রমিক বিতনা বিরাইক বললেন, ‘‘আগে বাগানে ঢাকের শব্দে উৎসবের মেজাজ তৈরি হত। বিশ্বকর্মা পুজোয় প্রচুর খিচুড়ি ভোগ রান্না হত। দল বেঁধে আমরা দিনে-রাতে খেতাম। ছোটবেলায় পুজোর সময়ে যাত্রাও দেখেছি। এত দিন তবু পুজোটুকু হত। এ বছর কিছুই হল না!’’
বাগান এলাকায় পুজো হয়েছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। যাঁদের বাড়িতে মোটরবাইক বা সাইকেল রয়েছে, তাঁরা নিজেদের মতো পুজো করেছেন। চা বাগানের বাসিন্দা তথা পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মেরু হেমব্রম নিজের বাড়িতে পুজো করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন মজুরি না পাওয়া শ্রমিকেরা এক হয়ে পুজো করতে পারেননি।
রায়পুর চা বাগানের শ্রমিকেরা নিজেদের মতো করে চা পাতা তুলে বাজারে বিক্রি করেন। পাতা বিক্রি থেকে কোনও দিন ৬০ টাকা, কোনও দিন ৮০ টাকা ‘হাজিরা’ পান তাঁরা। একশো দিনের কাজের মজুরিও বন্ধ। তবে রেশনে চাল-আটা মেলে। বাগানের শ্রমিক বিশু সাওসি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। হয়তো দু’বেলা দু’মুঠো জুটে যাচ্ছে, কিন্তু হাতে টাকা নেই। তাই পুজোও হয়নি।’’
উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে বিশ্বকর্মা পুজো বড় উৎসব। প্রতিটি চা বাগানের কারখানায় যন্ত্র আর সরঞ্জামের পুজো হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজনের জৌলুস এক-একটি চা বাগানের আভিজাত্যের প্রতীক বলেও মনে করা হয়। রায়পুর চা বাগানের মালিককে একাধিক বার নোটিস পাঠিয়ে ডেকেছে রাজ্য সরকার। মালিক যাননি বলে দাবি। রায়পুর চা বাগানের জমির লিজ় বাতিলের সুপারিশও নবান্নে পাঠানো হয়েছে। যদিও মালিকানা নিয়ে সমস্যা কবে মিটবে অথবা বাগান কবে খুলবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।
বাগানের তৃণমূল নেতা প্রধান হেমব্রম বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা কষ্টে আছেন। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন অন্য বাগানে যখন ঢাকের শব্দ, হাসিমুখের চলাফেরা, তখন আমাদের বাগানের কারখানায় জমাট অন্ধকার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy