Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতেই কুপিয়ে খুন একাকী বৃদ্ধাকে

ঘরের ভিতর খুন হলেন এক বৃদ্ধা। আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা শহরের বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা বাড়িতে একাই থাকতেন। শনিবার সকালে খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে।

মা আর নেই। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধার মেয়ে।— নিজস্ব চিত্র।

মা আর নেই। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধার মেয়ে।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

ঘরের ভিতর খুন হলেন এক বৃদ্ধা। আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা শহরের বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা বাড়িতে একাই থাকতেন। শনিবার সকালে খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে। আনা হয় এসএসবি-র প্রশিক্ষিত কুকুর। দিনভর তদন্ত করেও অবশ্য খুনি বা খুনের কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ। তারা জানায়, মৃত বৃদ্ধার নাম নীতি নাথ (৬৫)। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

এই ঘটনার পরে আতঙ্কিত বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন বড় বড় কিছু শহরের আবাসনে একাকী বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা খুনের ঘটনা তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু ফালাকাটার মতো মফসসল শহরেও এমন ঘটনায় তাঁরা খুবই ভয়ে আছেন। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করার জন্য তাঁরা পুলিশের কাছে দাবি করেন।

পুলিশের একটি অংশের অনুমান, খুনিরা ওই বৃদ্ধার পরিচিত। যে বা যারাই এসে থাকুক তাদের বৃদ্ধা নিজেই দরজা খুলে দিয়েছিলেন। জোড় করে কেউ ঘরে ঢুকতে গেলে দরজা জানলা কিছু ভাঙা থাকত। খুন করার পর খুনিরা পিছনের দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। সে দরজাও ভাঙা ছিল না। বৃদ্ধার ঘরে দীর্ঘ দিন ধরে পরিচারিকার কাজ করেন এলাকারই মল্লিকা দাস। তিনি বলেন, “সকাল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটায় ওঠার অভ্যাস ছিল। প্রতিদিন সকালে কাজে এসে আমি বাড়ির গেট ও দরজা খোলা পেতাম। শনিবার সকালে এসে গেটে তালা দেখে বারবার কলিং বেল বাজালেও মাসিমার সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে ছেলেটিকে বাইরে থেকে জোড়ে জোড়ে ডেকে ঘুম থেকে তুলে ভিতরে ঢুকি। বাড়ির ভিতরে ঢুকে সব দরজা জানালা বন্ধ দেখে পাড়ার লোকদের ডাকি। সবাই মিলে রান্নাঘরের দরজা ভেঙে দেখি সেখানে মাসিমার রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে।”

আলিপুরদুয়ারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পার্থসারথি মজুমদার বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘরের বিছানা লন্ডভন্ড অবস্থায় ছিল। বৃদ্ধার দেহ পড়ে ছিল শোওয়ার ঘর লাগোয়া রান্নাঘরে। ঘর থেকে কিছু চুরিও হয়নি। কী কারণে বৃদ্ধা খুন হলেন, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’’

বৃদ্ধার স্বামী বছর দেড়েক আগে মারা যান। বৃদ্ধার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে রুমি নাথ ওই পাড়াতেই থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘রাতেও মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। সকালে মৃত্যু সংবাদপেয়ে ছুটে আসি। মায়ের কোনও শত্রু ছিল বলে জানা নেই। কেন খুন হলেন কিছু বুঝতে পারছি না।’’ শনিবার ছোট মেয়ের বাড়ি জলপাইগুড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বৃদ্ধার। রাতেই তিনি মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য কাপড় ও সোনার অলঙ্কার একটি ব্যাগে গুছিয়ে রেখেছিলেন। সকালেও ওই ব্যাগে জিনিসপত্র সব গোছানো ছিল। মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে জলপাইগুড়ি থেকে ছুটে আসেন ছোট মেয়ে দীপা নাথ ও জামাই প্রদীপ দেবনাথ। পেশায় হাই স্কুলের শিক্ষক প্রদীপবাবু বলেন, “শনিবার ফালাকাটায় এসে শাশুড়ি-মাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সকালে এই ঘটনা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।’’

বাড়িতেই অন্য একটি ঘরে ভাড়া থাকেন ইলেকট্রিকের কাজ করা রতন বর্মন নামে এক জন। তিনি বলেন, ‘‘কাজ করে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে বলে রাত ন’টা নাগাদ মাসিমাকে ফোন করে বলেছিলাম। পরে রাত এগারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়ি। বাড়িতে ফেরার পর বুঝতে পারি তিনি ঘুমোননি। তবে সন্দেহজনক কিছু মনে হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old lady Deaceased Body Police arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE