অসহায়: বাড়ি গিলেছে গঙ্গা। সব হারিয়ে প্রশাসনের দেওয়া ত্রিপলের নীচে এখন রাস্তায় ঠাঁই হয়েছে লালুটোলার মতিউর রহমানের। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
নিজের ছোট ভিটেতে দু’টি পাকা ঘর ছিল। দিনমজুরি করে জমানো টাকায় তিল তিল করে সেই ঘরদু’টি গড়ে তুলেছিলেন মতিউর রহমান। দিন পনেরো আগের ভাঙনে, ভিটেমাটি-সহ দু’টি ঘরই গ্রাস করে গঙ্গা। এখন নিজের আর কোনও জমি নেই। কাছে থাকা ভীমাগ্রাম ম্যানেজ়ড প্রাইমারি স্কুলে ঠাঁই নেবেন তারও জো নেই। কারণ, মাসখানেক আগে গঙ্গা ভাঙনে আরও যাঁদের ভিটেমাটি চলে গিয়েছে, তাঁরা সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন। অগত্যা গঙ্গার পাশেই বাঁধের ঢালে প্রশাসনের তরফে দেওয়া ত্রিপলের নীচে দিন গুজরান চলছে তাঁর।
গঙ্গা ভাঙনের জেরে বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের লালুটোলায় এভাবে কোনও পরিবারের দিন কাটছে ত্রিপলের নীচে বা কোনও পরিবার আশ্রয় নিয়েছে কাছেপিঠের স্কুলগুলিতে। একই ঘরে সহাবস্থান একাধিক পরিবারের। এই দুর্গতদের পুনর্বাসনের দাবিই এখন জোরালো হয়ে উঠেছে। বাম দলগুলি এই দাবিতে সরব হয়েছেন।
২০১৬ সালে গঙ্গা প্রথম থাবা বসিয়েছিল কালিয়াচক ৩ ব্লকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারটোলায়। সে বার তৎকালীন বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক স্বাধীন সরকারের বাড়ি-সহ প্রায় ১০০টি পরিবারের ঘরবাড়ি গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়েছিল। ৬০টি পরিবারকে সরকার পুনর্বাসন দিলেও, বাকি পরিবারগুলি এখনও বীরনগর হাই স্কুলের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে বসবাস করছেন। এ বার বর্ষার শুরুতেই জোর গঙ্গা ভাঙন শুরু হয় লালুটোলায়। এর পর ভীমাগ্রাম, চিনাবাজার, মোল্লাটোলা গ্রামগুলিতে গঙ্গা গ্রাস করে শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি। ওই বাসিন্দাদের কিছু অংশ ভীমাগ্রাম ম্যানেজ়ড, নাসিরটোলা, মোল্লাটোলা, হাতিচাপা প্রাইমারি স্কুলগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু দুর্গতদের সংখ্যা এতো বেশি যে, স্কুলে আর জায়গা হচ্ছে না। ফলে, তাঁরা কেউ বাঁধের উপর, কেউ আম বাগানে ত্রিপল টাঙিয়ে এখন বসবাস করছেন।
এমনই দুর্গত মতিউর রহমান বলেন, ‘‘সব গঙ্গা গিলে নিয়েছে। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় ত্রিপলের নীচেই পরিবার নিয়ে আছি। সরকার যদি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে, তবে এভাবেই কষ্টে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।’’ একই বক্তব্য লাল মহম্মদ, এন্তাজ আলি, নাইনুর বিবি, ফিরদৌসী বিবিদের। সিপিএম নেতা দেবজ্যোতি সিংহ বলেন, ‘‘ভাঙন দুর্গতদের পুনর্বাসন দরকার। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (বিপর্যয় মোকাবিলা) মৃদুল হালদার বলেন, ‘‘পুনর্বাসনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে।’’
গঙ্গা ভাঙনে ক্ষতি হয়েছে মানিকচকের গোপালপুর, কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর এলাকায়। সেচ দফতরের মালদহ ডিভিশনের নির্বাহী আধিকারিক প্রণব সামন্ত বলেন, ‘‘যে এলাকায় ভাঙন হচ্ছে সেখানে আপৎকালীন ভাবে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy