Advertisement
E-Paper

নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন জনপদ

পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ‘সুন্দরী’ জয়ন্তী নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বিরাট জনপদ। জয়ন্তীকে ঘিরে এখনও অনেক স্বপ্নও রয়েছে তাঁদের।

পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০২:৩০
নদীবক্ষ: পাহাড় থেকে পাথর বয়ে আনছে নদী। উঁচু হচ্ছে নদীবক্ষ। তাতেই বাড়ছে বিপদ। ছবি: নারায়ণ দে।

নদীবক্ষ: পাহাড় থেকে পাথর বয়ে আনছে নদী। উঁচু হচ্ছে নদীবক্ষ। তাতেই বাড়ছে বিপদ। ছবি: নারায়ণ দে।

জীবনের ৮৩টা বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন কিরণ ছেত্রী। এর মধ্যে ছয় দশকের বেশি সময় একটি নদীকে ঘিরে বহু মানুষের উত্থান-পতন দেখেছেন। কিরণের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, নিজের জীবদ্দশায় সেই নদীর গ্রাসে গোটা একটা এলাকার ধ্বংস তাকে দেখে যেতে হবে না তো? প্রশ্নটা আরও অনেকের মনেই ঘুরে বেড়ায়।

অথচ, পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ‘সুন্দরী’ জয়ন্তী নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বিরাট জনপদ। জয়ন্তীকে ঘিরে এখনও অনেক স্বপ্নও রয়েছে তাঁদের। এই নদীই তো কখনও তাঁদের দিক থেকে মুখ ফেরায়নি। কর্ম সংস্থানে আঘাত এলে জয়ন্তী বিকল্প আয়ের উৎস জুগিয়েই গিয়েছে।

সেই নদীই এখন বিপদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। নদী এ বার বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে উঠবে না তো?

সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই জয়ন্তীর হাত ধরে যাত্রা শুরু। সেই সময় জয়ন্তীতে পাহাড়ের উপর ডলোমাইট মাইনিং-এর কাজ হতো। কিন্তু তার সঙ্গে জয়ন্তী নদীর সরাসরি কোনও যোগাযোগ কখনই ছিল না বলে দাবি। যদিও ডলোমাইট কোম্পানির দফতরগুলি এই নদীর ধারেই গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, সেই সময় বিহার ও ওড়িশা থেকে আসা প্রচুর শ্রমিক ডলোমাইট কোম্পানিগুলিতে কাজ করতেন। তাঁরা জয়ন্তীতেই থাকতেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা অংশও সেই কাজে যুক্ত ছিলেন। বাকি অংশটি যুক্ত ছিলেন জয়ন্তীর নদী বক্ষ থেকে পাথর তোলার কাজে। বর্ষার সময় ডলোমাইটের কাজ বন্ধ থাকলে ভিন রাজ্যের অনেক শ্রমিক বাড়ি না ফিরে পাথর তোলার কাজে নেমে পড়তেন। ডলোমাইট ও পাথর সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে জয়ন্তীতে রেলপথ বসেছিল। তা ঘিরে উন্নয়ন হয়। কিন্তু আশির দশকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প তৈরির পর জয়ন্তীর পুরো চিত্রই পাল্টাতে শুরু করে। এলাকাটি সংরক্ষিত স্থান হয়ে যাওয়ায় সেখানে একের পর এক নিয়ম লাগু হতে শুরু করে। প্রথমে উঠে যায় রেল পথ। বন্ধ হতে থাকে ডলোমাইট কোম্পানিগুলি। এরপর ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্তিতি আরও পাল্টে দেয়। উঁচু হতে থাকে নদী বক্ষ। ১৯১৬ সালে জয়ন্তী নদীর উপর একটি সেতু তৈরি করা হয়েছিল। নদী বক্ষ উঁচু হতে হতে সেই ভগ্ন সেতুর দু’টি পিলারের উপরের অংশও গ্রাস করার দিকে এগোচ্ছে।

নদী থেকে পাথর তোলার কাজও বন্ধ। ডলোমাইট কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়া শুরু হতেই ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের বড় অংশই ফিরে গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেও কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু এত বড় আর্থিক আঘাতের পরও মুখ ফেরায়নি জয়ন্তী। বরং তাকে ঘিরে প্রকৃতির সুন্দর রূপ স্থানীয় বাসিন্দাদের পর্যটন ব্যবসার একটা নতুন দিশা দিয়েছে। গড়ে উঠেছে একের পর এক হোম স্টে।

কিন্তু কিরণ বলেন, ‘‘সারা বছর তেমন জল থাকে না, কিন্ত প্রতি বর্ষায় জয়ন্তীর যে রূপ দেখছি, তাতে এলাকাটাই আর কত দিন থাকবে কে জানে?” স্থানীয় বাসিন্দা শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “পাহাড়ে ধসে পাথর বয়ে আনার ফলে নদীবক্ষ উঁচু হচ্ছে। দু’দিক ধ্বংস করে এই নদী ক্রমশ প্রশস্তও হচ্ছে। এখুনি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে জয়ন্তীই হয়ত গোটা এলাকা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।” পরিবেশকর্মী অমল দত্তও বলেন, “অন্তত পাহাড়ে ধস আটকাতে পারলেও সমস্যার সমাধান সম্ভব।”

কে শুনছেন সেই আর্তি?

Jayanti river Alipurduar আলিপুরদুয়ার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy