Advertisement
E-Paper

অভাবের তাড়না ভুলতে নেশা-পাচারকারীদের ফাঁদে শ্রমিকেরা

সদ্য শেষ হল চা বাগানে তিন দিনের ধর্মঘট। শ্রমিকদের দাবি ছিল ন্যূনতম মজুরির। উত্তরের কিছু বাগানে কী অবস্থায় আছেন শ্রমিকেরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। নেশাই গ্রাস করছে চা বাগানগুলিকে। তরুণী থেকে মহিলারা সেই কষ্টের হাত থেকে বাঁচতে আবার পড়ে যাচ্ছেন পাচারকারীদের খপ্পরে। বন্ধ চা বাগানগুলি তো বটেই, বাদ যাচ্ছে না রুগ্‌ণ চা বাগানগুলিও।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৮:৩০

তখন ভরদুপুর, মাথার উপরে ঝাঁ ঝাঁ করছে সূর্য। গলির রাস্তা ধরে হেঁটে বাড়ির পথে ফিরছেন এক মহিলা শ্রমিক। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। চেহারায় ছাপ অবশ্য পঞ্চাশ পেরোনোর। কখনও এক পা এগিয়ে টলে পড়ছেন তিনি। সেই অবস্থাতেই আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। কেন এই অবস্থা? কিছুই লুকোলেন না তিনি। বললেন, “সকাল থেকেই নেশা করে থাকি। কী করব? টাকা নেই। সংসারে চির অশান্তি। তাই এটাই ভাল।”

এই নেশাই গ্রাস করছে চা বাগানগুলিকে। তরুণী থেকে মহিলারা সেই কষ্টের হাত থেকে বাঁচতে আবার পড়ে যাচ্ছেন পাচারকারীদের খপ্পরে। বন্ধ চা বাগানগুলি তো বটেই, বাদ যাচ্ছে না রুগ্‌ণ চা বাগানগুলিও।

শামুকলতার রহিমাবাদ থেকে তুরতুরি, চুনিয়াঝোড়া সহ ডুয়ার্স, পাহাড়ের চা বাগানে এমন অভিযোগ ভুরভুরি। এখনও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বাসিন্দারাই জানান, অনেক যুবক থেকে তরুণী, এমনকী মহিলারাও বাইরে গিয়েছেন কাজের খোঁজে। সে সবের খবর অধিকাংশের খবরই অবশ্য পৌঁছয় না পুলিশের কাছে। যে অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশের খাতায় ততক্ষণে কাজ শেষ করে নিখোঁজ হয়ে যায় কারবারীরা। শামুকতলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক পৃথ্বীশ কর্মকার জানান, বহু অভিযোগ তাঁরা এখনও পান। অনেক মামলাও হয়েছে পুলিশের কাছে। তিনি বলেন, “পাচারের ঘটনা তো ঘটছেই। বাগানে প্রচারও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মধু চা বাগানের বহু লাইন পুরুষ শুন্য হয়ে আছে। বাগান বন্ধ হয়ে পড়ায় সবাই চলে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যে। সেখানকার অবস্থাও ভাল নয়।”

সময় পাল্টায়। সরকার পাল্টায়। আশ্বাস আসে। আসলে চা বাগানগুলির বাসিন্দাদের জীবনযাপন তেমন ভাবে পাল্টায়না। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়ে যাঁরা একটু উদগ্রীব হয়ে ওঠেন তাঁদেরই টার্গেট করে এই পাচারকারীরা।

এইসব এলাকায় পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহিলারা কাজ করেন। চা বাগান তো বটেই, জঙ্গলে যেতেও ভয় পান না কেউ। গীতা চিকবরাইকের কথায়, “কাজে আমাদের ভয় নেই। কিন্তু কাজই তো থাকে না মাঝে মাঝে। তখন সবার মাথা খারাপ হয়। এমন সময় গিয়েছে যখন একবেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে।” নেশা বলতে সেই এলাকায় হাঁড়িয়া, স্থানীয় ভাবে তৈরি হওয়া মদ থেকে শুরু করে মাদকের নেশাও ছড়িয়ে পড়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “চা বাগানগুলির অবস্থা পাল্টাতে নানা ভাবে চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কোনও অপরাধের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তার পরেও অনেক কিছুই থেকে যায়।”

বাগান ঘেরা সেই জায়গায় অবশ্য স্কুলে পড়াশোনার যে সব পরিকাঠামো রয়েছে তা নয়। হাতে গোনা প্রাথমিক স্কুল। সেই তুলনায় হাইস্কুল তো আরও কম। কাউকে দুই কিলোমিটার, কাউকে পাঁচ কিলোমিটার গিয়ে পড়তে হয়। কলেজ একটি। শুধু তাই নয়, এলাকায় ভাল শিক্ষক পাওয়া যায় না। একটু উঁচু ক্লাসে উঠলে হয় শামুকতলা নতুবা আলিপুদুয়ার ছুটতে হয় তাঁদের। তবে সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হার মানতে চায় না বাগানের পড়ুয়ারা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, চা বাগান এলাকায় শিক্ষার হার বেড়ছে। স্নাতক হচ্ছেন অনেকেই। স্নাতকোত্তরেও পড়ছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমরা সমস্ত জায়গায় শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরি করছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেক জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ তৈরি করছেন। চা বাগানও সেখানে পিছিয়ে থাকবে না।” (শেষ)

Drugs Smugglers Tea Garden Workers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy