Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ভাঙনের ভয়
Maldah

Malda: ‘অস্থায়ী হলেও কাজ তো হোক’

একই কথা শোনা গেল কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর-শোভাপুর পঞ্চায়েতের গোলাপমণ্ডলপাড়া ও উজানে থাকা খাসপাড়া এলাকায়।

কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপমণ্ডলপাড়ায় গঙ্গার ভাঙন। নিজস্ব চিত্র

কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপমণ্ডলপাড়ায় গঙ্গার ভাঙন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২২ ০৮:৩০
Share: Save:

গঙ্গার পাড়েই বাস হলেও এর আগে গত দু’দশকে ভাঙন দেখেননি তাঁরা। কিন্তু গত বছর আচমকা ব্যাপক ভাঙন শুরু হয় মালদহের মানিকচক ব্লকের গোপালপুর পঞ্চায়েতের বালুটোলা, এলাহিটোলা ও সহবতটোলায়। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিঘার পরে বিঘা আবাদি জমি তলিয়ে গিয়েছিল। বেশ কিছু বাড়িঘরও গিলে নেয় গঙ্গা। শতাধিক পরিবারের সদস্যেরা নিজেরাই পাকা বাড়ি-ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবু ভাঙন ঠেকাতে সেচ দফতর কাজ শুরু করছিল না বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ভাঙন দুর্গতেরা ধরমপুরে গিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন। তার পরেই সেচ দফতর আপৎকালীন ভিত্তিতে হলেও ভাঙন রোধ শুরু করে।

এর পরে কেটে গিয়েছে এক বছর। ওই তিনটি গ্রামে স্থায়ী ভাবে আজও ভাঙন প্রতিরোধের কাজ হয়নি। এ বছর ফের ভাঙন শুরু হয়েছে সেই গোপালপুরেরই বালুটোলায়। এ বারেও আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যেতে শুরু করেছে। নদীর কাছাকাছি যাঁদের বাস, সেই পরিবারগুলি ভাঙন-আতঙ্কে কাঁটা হয়ে আছে। বালুটোলার বাসিন্দা রাজ্জাক শেখ, আলম শেখরা বলেন, ‘‘ভাঙনে আমাদের সব গিয়েছে। অথচ, আমাদের কথা কেউ ভাবে না।’’

একই কথা শোনা গেল কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর-শোভাপুর পঞ্চায়েতের গোলাপমণ্ডলপাড়া ও উজানে থাকা খাসপাড়া এলাকায়। পারলালপুর থেকে গোলাপমণ্ডলপাড়ার একাংশ পর্যন্ত সেচ দফতর স্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ শুরু করলেও, গোলাপমণ্ডলপাড়ার বাকি অংশে সে কাজ হচ্ছে না। গঙ্গার জল বাড়তেই ওই বাকি থাকা অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। গঙ্গার আগ্রাসী রূপ দেখে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়েছে। এলাকার গোপাল মণ্ডল, মধু মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘এখন এখানে অস্থায়ী ভাবেও যদি ভাঙন প্রতিরোধের কাজ না হয়, তবে আবাদি জমি তো বটেই, এমনকি, প্রচুর মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন।’’

অল্পস্বল্প ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে রতুয়া ১ ব্লকের জঞ্জালিটোলা, মানিকচক ব্লকের ভূতনির সুকসেনাঘাট, নীলকান্তটোলা, নন্দীটোলা, কেশরপুর, বাঘেদানটোলা, কালিয়াচক ২ ব্লকের সকুল্লাপুরের একাংশ, কালিয়াচক ৩ ব্লকের দুর্গারামটোলা, ভীমাগ্রাম এলাকাতেও। আবার পাড় ভাঙছে ফুলহার নদীপাড়ের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের ভাকুরিয়া, খোপাকাটি, গোবরা, দৌলত নগর, রতুয়া ১ ব্লকের বঙ্কুটোলা, মানিকচকের শঙ্করটোলায়। মহানন্দা পাড়ের হরিরামপুর, কুচিলা, গোবিন্দপুর, গালিমপুর এলাকাতেও এক অবস্থা। ওই এলাকাগুলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন নদীর জল বাড়তেই ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে সেচ দফতর বা ফরাক্কা ব্যারাজ, কারও উদ্যোগ নেই।

যদিও সেচ দফতরের অধীক্ষক বাস্তুকার (উত্তর মণ্ডল ১) উত্তমকুমার পাল বলেন, ‘‘যে এলাকাগুলি ভাঙনপ্রবণ অথবা বেশি ভাঙন হচ্ছে সেখানে ইতিমধ্যেই অস্থায়ী ভাবে হলেও প্রতিরোধ শুরুর চেষ্টা চলছে।’’ সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা জেলার মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘গোপালপুর এবং সুকসেনাঘাট এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে ১০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী শুখা মরসুমে সেই কাজ হবে। তবে কোথাও যদি ভাঙন বেশি হয়, তবে অবশ্যই আপৎকালীন ভিত্তিতে কাজ করা হবে।’’ (চলবে)

তথ্য সহায়তা: জয়ন্ত সেন, বাপি মজুমদার ও অভিজিৎ সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maldah River Erosion Natural Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE