নদীর স্রোতে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ভেসে গেলেন সাত জন। তার মধ্যে পাঁচ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও খোঁজ মেলেনি শিশু-সহ দু’জনের। আবার কোথাও গ্রামে নদীর জল ঢোকায় জলবন্দি হলেন হাজার হাজার মানুষ। রবিবার কোচবিহারে দেখা দিল এমন বিপর্যয়ের ছবি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে মাথাভাঙার কেদারহাটের জোড়শিমুলি-সহ একাধিক গ্রাম। সেখানেই জলের তোড়ে এক শিশু সহ-দু’জন ভেসে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নিখোঁজেরা হলেন দয়ারাম বর্মণ ও মৃন্ময় বর্মণ। মৃন্ময়ের বয়স ৯ বছর। একটি রাস্তা পার হওয়ার সময় দয়ারাম জলে ভেসে যায়। মৃন্ময় বাড়ির ছাদ থেকে জলে পড়ে যান। দু'জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি।
রবিবার সকাল থেকে কোচবিহারে তোর্সা, তিস্তা, জলঢাকা-সহ সমস্ত নদীর জল বাড়তে শুরু করে। নদীর জলে তোড়ে মাথাভাঙা ১ ব্লকের কেদারহাট, গিলাডাঙা, জোড়শিমুলি, হাজরাহাট, দৈভাঙি, বালাসি, কুরাপাতা ও মহিমেরকুঠি এলাকায় একাধিক মাটির বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। ওই এলাকাতেই প্রায় দশ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলে ভেসে গেছে বেশ কিছু গৃহপালিত পশু। জোড়শিমুলির বাসিন্দা রাজকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘চার ঘণ্টা জলমগ্ন থাকার পরে প্রশাসনের নৌকা এসে আমাদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়।’’ মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে জল ঢুকে যায়। তুফানগঞ্জের রায়ডাক নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষকুচি গ্রাম জলমগ্ন হয়। তুফানগঞ্জ পুরসভার নিউটাউন এলাকায় বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়। বৃষ্টির সময়ে বাজ পরে আহত হন চিলাখানা এলাকার ছামিয়া বিবি নামে এক মহিলা। কোচবিহারের ডাওয়াগুড়ি এলাকায় এক ব্যক্তি কালজানি নদীর জলে ভেসে যান। এ ছাড়াও তুফানগঞ্জের বক্সিরকুঠিতে কালজানি নদীতে কাঠ কুড়োতে গিয়ে তুফানগঞ্জে আরও চার জন ভেসে যান। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা ও পুলিশ সবাইকে উদ্ধার করেন। মেখলিগঞ্জের কুচলিবাড়ির ফকতের চরত ও সিংপাড়া চরের চারশোর বেশি বাড়ি জলবন্দি হয়ে পড়ে। স্রোতে ভেসে আসা এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন রানিরহাট এলাকার বাসিন্দারা। দিনহাটা শহরে একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়।
কোচবিহার শহরে কমবেশি ১০টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। একাধিক রাস্তা জলে ডুবে যায়। হাঁটু জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় সাধারণ মানুষকে। কোচবিহার রাজবাড়ির রেলিংয়ের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। চকচকার শিল্পতালুকের বড় অংশ জলবন্দি হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘পনেরো বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। তাই পরিস্থিতি খারাপ হয়।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘যে সব জায়গায় জল জমেছে, সেখানকার মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে আসা, থাকা, খাবার-সহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ কোচবিহারের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, ‘‘প্ৰত্যেক ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কিছু রান্নাঘর চালু করা হয়েছে। বেশ কিছু পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে আনা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজররাখা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)