গত বছরের শেষের দিকের ঘটনা। শিলিগুড়ি শহরের এক বড় ব্যবসায়ীর শো-রুম, অফিস আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। নামকরা গাড়ি প্রস্তুককারক সংস্থার তরফে নতুন ‘বিজনেস পার্টনারের’ খোঁজ শুরু হয়। খোঁজখবরে সামনে আসে, নেপালে ক্যাসিনোয় নিয়মিত যাতায়াত করতে গিয়ে কোটি টাকার কাছাকাছি ডুবেছে ওই ব্যবসায়ীর। শেষে, বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়েরা মিলে ‘উদ্ধার’ করেন ওই ব্যবসায়ীকে। ফের খোলে সেই শো-রুম।
এমন ঘটনা এখন আর শিলিগুড়িতে নতুন নয়। ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচি নদীর ধারে টাকা ‘ওড়ার’ ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ সীমান্ত ‘স্পর্শকাতর’ হয়ে ওঠার পরে কাঁটাতারহীন নেপাল সীমান্ত নিয়ে পুলিশ, বিভিন্ন এজেন্সি এবং সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) তরফে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তার জেরেই নেপালের ক্যাসিনোয় এপারের লোকজনের যাতায়াতের খবর সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, রায়গঞ্জ বা মালদহের মতো এলাকা থেকে লোকজন নিয়মিত নেপালের ক্যাসিনোয় গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছেন।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘শিলিগুড়ি থেকে নেপালে গিয়ে ক্যাসিনোয় টাকা ওড়ানোর তথ্য সামনে এসেছে। এরা কারা, তার খোঁজখবর রাখতে বলা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি বিহার, অসম এবং সিকিম থেকেও লোকজন নিয়মিত শিলিগুড়ি হয়ে নেপালে যাচ্ছেন। তাঁদের উপরেও নজর রাখতে বলা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নেপালের একটি বড় ক্যাসিনো বর্তমানে উত্তরের অন্যতম একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। নেপালের একাধিক ক্যাসিনোয় আগাম গাড়ির পারমিট করে ভারতীয়দের সীমান্ত পার করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে। সীমান্তে ঘোরার কথা বলে ওপারে ভারতীয় নাগরিকরা চলে যাচ্ছেন।
দার্জিলিং পুলিশের কয়েক জন অফিসার জানান, প্রতি সপ্তাহে পানিট্যাঙ্কি সীমান্তের ওপারে ধুলাবাড়ি, কাঁকরভিটায় কোটি কোটি টাকা ক্যাসিনোয় খেলা হচ্ছে। বিদেশি ছাড়়াও কারা এই বিপুল পরিমাণ টাকা জুয়ায় ‘ওড়াচ্ছেন’, তার খোঁজ রাখা হচ্ছে। সিকিমের বাসিন্দাদের সেখানকার ক্যাসিনোয় খেলা নিষিদ্ধ। তাই করমুক্ত রাজ্য সিকিম থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে লোকজন নেপালের ক্যাসিনোয় যাচ্ছেন। পুলিশের বক্তব্য, জুয়ার ওই আসরগুলি নিছক খেলার আসর হিসাবে চললে সমস্যা নেই। কিন্তু নেপালে অতীতের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নজরদারি রাখার বিষয় সামনে এসেছে।
পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, নেপালের বিভিন্ন এলাকায় একসময় উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, দাউদের ‘ডি-কোম্পানি’ থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের আনাগোনার খবর সামনে এসেছে। সেখানে টাকার লেনদেন, জাল ভারতীয় টাকার খবরও গোয়েন্দারা পেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ক্যাসিনোগুলিকে ঘিরে নেপালে কী চলছে, তা নিয়ে বিভিন্ন ভারতীয় এজেন্সি খোঁজ রাখা শুরু করেছে। কারণ, অনেকেরই অনুমান, টাকার এই বিপুল লেনদেনের ফাঁকে কোথাও কোনও ‘বিপদ’ আগামী দিনে তৈরি হতেই পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)