Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সান্তাকে নগদের আবদার

নোট বাতিলের ধাক্কায় সান্তাক্লজের কাছে আর্জি পৌঁছচ্ছে নগদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেরই বার্তা, ঝুলিতে কিছু নগদ টাকা থাকুক।

আজ বড়দিন। তারই সাজ বালুরঘাটের মহীনগরের একটি গির্জায়। শনিবার। — অমিত মোহান্ত

আজ বড়দিন। তারই সাজ বালুরঘাটের মহীনগরের একটি গির্জায়। শনিবার। — অমিত মোহান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

নোট বাতিলের ধাক্কায় সান্তাক্লজের কাছে আর্জি পৌঁছচ্ছে নগদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেরই বার্তা, ঝুলিতে কিছু নগদ টাকা থাকুক। শনিবারের মধ্যরাতে বড়দিনের ঘণ্টা থেকে রাস্তার জুড়ে আলোর মালার দৃশ্যে পরিবর্তন না হলেও প্রভাব পড়েছে কেনাবেচায়। কোচবিহারের চার্চে রঙের প্রলেপ পড়েনি, দার্জিলিঙে পর্যটকদের সেই উপচে পড়া ভিড়ও দেখা যাচ্ছে না।

দার্জিলিঙে মন্দা

মরসুমের শুরুতেই মন্দা। শীত যতই কনকনে হোক বড়দিনের আগে পরে দার্জিলিঙে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। এ বারে ঠান্ডার তেমন দাপট নেই। পর্যটকদেরও দেখা নেই। মাস দু’তিনেক আগে থেকে যে বুকিং হয়ে ছিল সেই পর্যটকরাই এসেছেন। নতুন করে বুকিং হয়নি বলে দাবি হোটেল ব্যবসায়ীদের। তবে গ্লেনারিজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করলেন তাদের বিক্রিতে মন্দা নেই। নগদের পরিবর্তে কার্ডে বরাবরই লেনদেন করা হয়। সে সুফল বড়দিনে মিলছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।

রং নেই দিনহাটায়

দিনহাটার মিশন চার্চে এ বার রঙের প্রলেপ পড়েনি। প্রতি বছর বড়দিনের ঢের আগে থেকে চার্চ চত্বর সাফসুতরো করার কাজ শুরু হয়। জঙ্গল পরিষ্কার হয়। দেওয়ালের পলেস্তার মেরামত হয়। পুরো চার্চ এবং আশেপাশের ভবনও রং করা হয়নি। এবারে সাফসুতরো হয়েছে। নগদ সঙ্কটের জেরে ঝাড়পোঁছের বেশি কাজ হয়নি। চার্চ কর্তৃপক্ষ দাবি করেলন, সদস্য এবং শুভানুধ্যায়ীদের চাঁদার টাকাতেই যাবতীয় আয়োজন হয়ে থাকে। এবারে চাঁদা উঠছে কম। ব্যাঙ্ক-এটিএমের সামনে যাঁরা দীর্ঘ লাইন দিয়েছেন তাঁরা বেশি নগদ টাকা হাতছাড়া করতে চাইবেন না বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। তার জেরে বাদ পড়েছে রঙের আয়োজন। দিনহাটা মিশন চার্চ কমিটির সভাপতি অরুণ বিশ্বাস বলেন, “নোট সমস্যার প্রভাব তো কিছুটা রয়েইছে। এবার চার্চ রঙ, সংস্কার কিছুই করা যায়নি।”

খুদেদের শুভেচ্ছা সান্তাক্লজের। শনিবার রাতে শিলিগুড়ির রাস্তায়। — বিশ্বরূপ বসাক

দোকান খালি বালুরঘাটে

আকর্ষণ বাড়াতে সান্টার টুপিতে নানা নকশা বসেছে। তবু বিক্রি নেই বলে আক্ষেপ করলেন বালুরঘাটের এক বিক্রেতা। দোকানের সামনে ঝোলানো সান্টা টুপি। সান্তাক্লজের টুপি মনিহারির দোকানগুলিতে ঝুলছে। মুদি দোকানেও রয়েছে সান্টার পসরা। শহরের এক মনিহারির দোকানি বাচ্চু পাল বলেন, ‘‘নগদের অভাবে মানুষ ভুগছেন। বড়দিনের উৎসবেও তার প্রভাব পড়েছে।’’ বালুরঘাটের চকভৃগুর শিমূলতলির বাসিন্দা কেক বিক্রেতা নয়ন মোহান্ত জানান, বড়দিন উপলক্ষে নামি কোম্পানির প্যাকেট কেকের চাইতে স্থানীয় বেকারির তৈরি কেকের কদর বরাবর বেশি থাকে। সে কারণে এই সময়ে তাঁরা কেকের হকারি করেন। অথচ, এ দিন বিকেল পর্যন্ত ১০০ টাকার কেকও বেচতে পারেননি নয়ন।

ভিড় কম শিলিগুড়িতে

আলোর মালায় সেজেছে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড-বিধান রোড। সেবক রোডের ঘড়ি মিনারেও আলো-রঙের সজ্জা। মাইকে বাজছে জিঙ্গল বেলও। আলোর সাজ দেখতে সন্ধ্যে থেকে রাস্তায় ভিড়ও দেখা গেল। ভিড় কম বিধান মার্কেটে।

ফি বছর বড়দিনের আগের সন্ধ্যে যে বেকারিগুলির সামনে লাইন দিয়ে কেক কিনতে হয় সেখানে এ দিন ক্রেতাদের ব্যস্ততা দেখা যায়নি। গত শুক্রবার রাত বারোটার পরেও খোলা ছিল একটি বেকারি। তাঁদের দাবি গভীর রাত পর্যন্ত খুলেও বিক্রি গত বছরকে টেক্কা দেওয়া দূরের কথা ছুঁতেও পারেনি।

হাকিমপাড়ার একটি দোকানে বড়দিনের আগে থেকে কেকের জন্য আলাদা টেবিল পাতা হয়। এবার টেবিল নেই। নগদের সঙ্কটে টেবিল ছেড়ে কেক উঠেছে আলমারিতেই। শনিবার রাতেও অধিকাংশ বেকারিতে দেখা গেল সন্ধ্যের সাজানো সম্ভার প্রায় একই রকম রয়ে গিয়েছে।”

মন ভাল নেই পাহাড়ে

সন্ধ্যে থেকেই ভিড় উপচে পড়েছিল দার্জিলিঙের চার্চে। মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রাথর্না। কেক খাইয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় চলল। তবে পাদ্রীদের মুখের হাসিও যেন খানিকটা ম্লান। দার্জিলিঙের ডিওক্সে বিশপ স্টিফেন লেপটা বলেন, ‘‘নগদের অভাব প্রার্থনার পবিত্রতায় কোনও ছাপ ফেলেনি। উৎসবের আন্তরিকতাও অমলিন। তবে কত দুঃস্থ পরিবার এবার পরিস্থিতির চাপে শিশুদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেননি। কত বাড়িতে উপহার পৌঁছয়নি। তাই মন ভাল নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas gift
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE