অনেক আগের না হলেও, ঘটনাটা কিছু পুরানো। জেলার এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে বেশ কিছু পুলিশ আধিকারিক ও কর্মী থেকে শুরু করে অন্য বিভিন্ন পেশায় যুক্তদের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব করা হল। সেখানে সেই পুলিশের শীর্ষ কর্তার ছবি থাকায় অনেকে সেটা আসল অ্যাকাউন্ট বলে ধরেও নিলেন। যাঁদের মনে সন্দেহ হল, তাঁরাও আবার ভয়ে সেই পুলিশ কর্তাকে কিছু বলতে পারলেন না। তবে দ্রুত সেই পুলিশ কর্তা নিজেই বুঝে গিয়েছিলেন, প্রতারকেরা তাঁর নাম ও ছবি-সহ একটি ‘ভুয়ো অ্যাকাউন্ট’ খুলে অনেকের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে নেমেছে। সঙ্গে সঙ্গেই প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন তিনি।
কিন্তু পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, তার আগেই প্রতারকদের জালে পড়ে গিয়েছেন অনেকে। ফেসবুকে দেওয়া নির্দিষ্ট একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠিয়ে দিয়েছেন তাঁদের কেউ-কেউ। প্রতারিতদের মধ্যে ছিলেন পুলিশের আধিকারিক-কর্মীরাও। আলিপুরদুয়ারের এক পুলিশ কর্তার কথায়, “সাইবার অপরাধ নিয়ে পুলিশ আধিকারিক বা কর্মীরাই যদি এ ধরনের বোকামি করেন, তা হলে সাধারণ মানুষের আর দোষ কোথায়?”
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, একটা সময় জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘন-ঘন ঘটত। প্রচারের ফলে এখন অনেকটাই সচেতন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বসে নেই সাইবার অপরাধীরাও। অভিযোগ, সাইবার প্রতারণা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে নতুন-নতুন কৌশল তৈরি করছে তারা। তার মধ্যে সব চেয়ে চিন্তা বাড়াচ্ছে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট। পুলিশের সাইবার শাখা আরও জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ড, বিহার বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য থেকে যেমন এ ধরনের চক্র চলছে, তেমনি কলকাতা থেকেও এ ধরনের প্রতারণা হচ্ছে। তথ্য বলছে, প্রতি মাসে গড়ে অন্তত পঞ্চাশটি করে সাইবার প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশের কাছে। যা চিন্তা বাড়িয়েছে জেলা পুলিশের।
এই অবস্থায় সাইবার অপরাধ কমাতে সচেতনতায় আরও জোর দেওয়ার দাবি উঠেছে। বিশেষ করে, প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে গোটা রাজ্য জুড়ে সাইবার আপরাধীদের জালে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে গত কয়েক মাসে। যা ভাবাচ্ছে জেলা পুলিশকে। আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, জেলাজুড়ে সাইবার অপরাধ নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার চলছে। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে চা বলয়েও শিবির করে হচ্ছে সচেতনতার প্রচার। তার পরেও অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে দেওয়ায় চিন্তায় পুলিশের একাংশও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)