শুধু রায়ডাক নয়, ডুয়ার্সের প্রতিটি চা বাগানেই শ্রমিকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা তছরুপের চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে সন্দেহ জোরদার হয়েছে। সম্প্রতি রায়ডাক চা বাগানের পিএফ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর এমন নানা অভিযোগে সরব হয়েছে ডান-বাম সহ বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনগুলির অভিযোগ, প্রতিটি চা বাগানে চা শ্রমিকদের অজ্ঞতা এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে পিএফের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র।
শ্রমিক সংগঠনগুলির সন্দেহ, ওই চক্রে চা বাগানের কর্মীরা যেমন জড়িত রয়েছেন, তেমনই স্থানীয় দালাল, ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসের কর্মীদের একাংশ জড়িত রয়েছেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। কিন্তু পিএফ ও শ্রম দফতরের মত যাদের এর উপর নজরদারি রাখার কথা, তারা নীরব দর্শকের কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে প্রতিটি চা বাগানে আলাদা ভাবে তদন্তের দাবি তুলেছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলি। আরএসপি বিধায়ক ইউটিইউসি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল দাস এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটছে। পিএফ অফিসের কর্মীদের একাংশ যুক্ত না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করছি। এর বিরুদ্ধে ডুয়ার্স জুড়ে আন্দোলনে নামা হবে।’’ আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির অন্যতম নেতা দশরথ তিরকে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের দ্রুত চিহ্নিত করে যাতে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় সেটা দেখব। শ্রমমন্ত্রীর কাছে প্রতিটি চা বাগানে আলাদা ভাবে তদন্ত করার আর্জি জানাব।’’
এ দিকে রায়ডাক চা বাগানের পিএফ ক্লার্ক অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁদের সই জাল করে অথবা ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে তাঁদের মৃত দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় ওই পিএফ ক্লার্ককে সাসপেন্ড করেন বাগান কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার ওই বাগানের ম্যানেজার এবং শ্রমিকরা আলাদা ভাবে অজয়বাবুর বিরুদ্ধে শামুকতলা থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। অভিযোগের তিনদিন পরেও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক দীপক দাস জানান, গত বছর নভেম্বর মাসে রায়ডাক চা বাগান কর্তৃপক্ষ, শামুকতলা থানা এবং ব্যাঙ্কে লিখিত ভাবে পিএফ কেলেঙ্কারির বিষয়টি জানানো হয়। সে সময় ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমনটা হত না।
গত শুক্রবার নির্দিষ্ট ভাবে দুটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেননি। দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের কুমারগ্রাম ব্লক সভাপতি বিনয় মিনজ এই ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। শ্রম দফতরের শিলিগুড়ি মহম্মদ রেজাউল বলেন, ‘‘পিএফ কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাভুক্ত। তাই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করছি না।’’ পিএফ দফতরের জলপাইগুড়ি আধিকারিক এস বি, সিংহ জানান, “অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমাদের দফতরের কোন কর্মী যুক্ত থাকার মত নির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা হবে”।
কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাও বলেন, “চা শ্রমিকদের এমনিতেই দুর্দশার শেষ নেই। এর পরে তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা এ ভাবে তছরুপ কোন ভাবে মানা যায় না। শীঘ্রই বিধানসভায় তুলে এ ব্যাপারের শ্রমমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করব ।প্রতিটি চা বাগানে যাতে আলাদা ভাবে তদন্ত করা হয় সে দাবিও জানাব।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy