Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুড়িয়ে খুনে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে মিছিল

শ্বাসরোধ করে খুন করার পর বধূর দেহ পুড়িয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর অভিযোগ উঠেছিল স্বামী, দুই পুত্র-সহ পুত্রবধূদের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে তাদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি তুলে পথে নামলেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। ফালাকাটার বিভিন্ন ক্লাব, ব্যবসায়ী-সহ সাধারণ মানুষ এই মিছিলে যোগ দিয়ে বিডিও অফিস ও থানায় বিক্ষোভ দেখান ও স্মারকলিপি দেন।

অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বাসিন্দাদের মিছিল।

অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বাসিন্দাদের মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৫
Share: Save:

শ্বাসরোধ করে খুন করার পর বধূর দেহ পুড়িয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর অভিযোগ উঠেছিল স্বামী, দুই পুত্র-সহ পুত্রবধূদের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে তাদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি তুলে পথে নামলেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। ফালাকাটার বিভিন্ন ক্লাব, ব্যবসায়ী-সহ সাধারণ মানুষ এই মিছিলে যোগ দিয়ে বিডিও অফিস ও থানায় বিক্ষোভ দেখান ও স্মারকলিপি দেন। এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে এলাকা জুড়ে বড় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেছেন, ‘‘খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের সন্ধানে আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা চালাচ্ছি। শীঘ্রই তারা ধরা পড়বে।’’

২৯ মার্চ ফালাকাটা শহরের অরবিন্দপাড়া এলাকার বাসিন্দা পূরবী করের (৪৮) দগ্ধ দেহ বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ঘটনাটিকে নিছক আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন তাঁর স্বামী দুলাল কর-সহ দুই পুত্র ও তাদের স্ত্রী। ঘটনার দিন থানায় লিখিত ভাবে তাঁর বড় ছেলে জানিয়ে দেন পূরবীদেবী আত্মহত্যা করেছেন। তবে পাড়ার বাসিন্দারা তাঁদের দাবি উড়িয়ে দেন। বাসিন্দাদের দাবি ছিল গায়ে আগুন দিলে যন্ত্রণায় যে কেউ চিৎকার করতে থাকবেন। এ ক্ষেত্রে ভোরে তিনি গায়ে আগুন দিলেও লাগোয়া বাড়ির লোকজন কোনও চিৎকারের শব্দ পাননি। দ্বিতীয়ত, পূরবীদেবীর দেহ এক জায়গায় বসে থাকা অবস্থায় মিলেছিল। গায়ে আগুন ধরলে কেউ এক জায়গায় বসে থাকবেন না। বাঁচার জন্য দৌড়বেন। সে ক্ষেত্রে রেলিং বিহীন ছাদ থেকে অনায়াসে তিনি নিচে পড়ে যেতেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।

থানার সামনে বিক্ষোভ। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাঁচ বছর আগে বড় ছেলের বিয়ের পর থেকেই পূরবীদেবীর সঙ্গে পরিবারের সকলের বিবাদ চলছিল। পূরবীদেবীকে তাঁর ছেলে রাত পর্যন্ত মারধর করত বলে অভিযোগ। আগের রাতেও ঘর থেকে পূরবীদেবীর চিৎকার শুনতে পান প্রতিবেশীরা। পর দিন ভোরে তাঁর স্বামী ও ছেলেরা চিৎকার করে লোক ডাকেন। বাসিন্দাদের অনুমান, আগের রাতে পূরবীদেবীকে স্বামী, পুত্র ও পুত্রবধূরা মিলে মারধরের পর শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। ঘটনাটি নিয়ে ফালাকাটা শহরে গুঞ্জন শুরু হয়। এমনকী, পুলিশের একাংশকে নানা কৌশলে প্রভাবিত করা হয়েছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। এ ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে লেনদেনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তাংরা। পুলিশ অবশ্য সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

কলকাতা পুলিশে কর্মরত পূরবীদেবীর ভাই উজ্জ্বল দে সরকার গত ৫ এপ্রিল ফালাকাটায় পৌঁছে এলাকার মানুষের কাছে বিষয়টি শোনেন। পূরবীদেবীর মা গীতাদেবী, মেয়ের স্বামী, ছেলে এবং পুত্রবধূদের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় তদন্ত করতে পুলিশ পূরবীদেবীদের বাড়ি পৌঁছনোর আগেই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দেন পাঁচ জন। দুলাল-সহ বাকি অভিযুক্তদের ফালাকাটায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে সরব হন বাসিন্দারা। গীতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘মেয়ের উপর ওরা অত্যাচার চালাত। ওরাই আমার মেয়েকে মেরেছে। সে আত্মহত্যা করেনি।’’

তবে অভিযুক্তরা এক সপ্তাহ ধরে গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও পুলিশ কেন তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না, তা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন ফালাকাটার লোকজন। এলাকার বাসিন্দা রণেশ তালুকদারের কথায়, ‘‘আমরা চাই অভিযুক্তরা দ্রুত ধরা পড়ুক। তাদের গ্রেফতার করার পর যাতে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়, তাই চাইছি সকলে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এর প্রতিবাদেই আমাদের মিছিল। সাত দিন পরেও অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে আমরা বড় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’’ অন্য দিকে ফালাকাটা ব্যবসায়ী সমিতি তাঁদের কার্যকরী কমিটির সদস্য অভিযুক্ত দুলালকে বরখাস্ত করেছে। সংগঠনের সভাপতি শঙ্কর সরকার বলেছেন, ‘‘এই ধরনের মানুষকে আমরা কার্যকারী কমিটিতে রাখব না বলে সভার সকলের সহমতে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE