দিল্লির নজরদারির ঠেলায় দিনভর ঝাড়ু হাতে প্ল্যাটফর্মেই কাটল রেল কর্তাদের। রবিবার সকাল থেকেই সাফাইয়ের বিশেষ অভিযান চলছে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি), শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে। এনজেপিতে স্থায়ী-ঠিকাকর্মীদের দিয়ে প্ল্যাটফর্ম সাফ-সুতরো করা হয়েছিল সকালেই। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ স্টেশন ম্যানেজার সহ রেলের অন্য আধিকারিকরা ফের একপ্রস্ত ঝাড়ু দেন প্ল্যাটফর্মে। কিছু বাদে প্ল্যাটফর্মে আসেন সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীলও। তিনি ঝাড়ু হাতে শুরু করেন প্ল্যাটফর্ম পরিষ্কার করা।
এ দিন রবিবার ছিল রেলের ‘স্বচ্ছ স্টেশন’ দিবস। তিনটি স্টেশন সাফসুতরো রাখার নির্দেশ দিয়েছে রেলবোর্ড। শুধু সাফসুতরো রাখাই নয়, রেল আধিকারিকদেরও সাফাই অভিযানে সামিল হতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোন আধিকারিক কোথায়-কখন ঝাড়ু হাতে সাফাই অভিযান করছেন তার ছবি তুলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু ঝাড়ু হাতে ছবি তুললেই হবে না, তিনি যে সত্যি কাজ করছেন তার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ‘আপলোড’ করতে নির্দেশ দিয়েছে রেল। এখানেই শেষ নয়, অতি সম্প্রতি বেসরকারি কয়েকটি এজেন্সিকে দিয়েও বিভিন্ন স্টেশনে নজরদারি শুরু হয়েছে। এই ‘ত্রি-ফলা’ নজরদারিতে তটস্থ রেল কর্তা থেকে কর্মী সকলেই।
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার বিভাগের এনজেপির এরিয়া ম্যানেজার বলেন, ‘‘এনজেপি এবং শিলিগুড়ি জংশন দুই স্টেশনেই সাফাই অভিযান হয়েছে। নিয়মিত সাফাই হয়, তবে এ দিন বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু স্টেশন নয়, ট্রেনের ভিতরের পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর রাখা হয়েছে। অভিযানের বিস্তারিত রেল বোর্ডকে জানানো হয়েছে।’’ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য রেলের বিভাগীয় রিপোর্টে এনজেপি স্টেশন কাটিহার বিভাগের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়েছিল। যদিও কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি রেল কর্তারা। দূরপাল্লার এক একটি ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার পরেই ঝাড়ু থেকে যন্ত্র নিয়ে সাফাই হয়েছে। কয়েক মিনিট বাদে বাদে রেল ট্র্যাক, প্ল্যাটফর্মের যে অংশে শেড নেই সেখানে জল ছেটানো হয়েছে। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন রেল আধিকারিকরা। কেন?
গত এপ্রিল মাসেও রেলের তরফে সাফাই অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় কাটিহার বিভাগের একটি স্টেশনে সকালে একপ্রস্ত সাফাই অভিযান হয়। সংবাদমাধ্যম ছবিও তোলে। যদিও দুপুরের পরে রেলের কোনও আধিকারিক প্ল্যাটফর্মের ধার মাড়ায়নি বলে অভিযোগ। বিকেলের মধ্যে দিল্লি থেকে ডিভিশনের সদরে ওই স্টেশনের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট পাঠানো হয়, সঙ্গে প্ল্যাটফর্মের যে অংশ ময়লা হয়ে রয়েছে, তার ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়। বিহারের একটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ময়লা জমে রয়েছে, সে ছবি দিল্লি মন্ত্রকে পৌঁছে গিয়েছে তা জেনে চমকে ওঠেন রেল কর্তারা। সূত্রের খবর, স্বচ্ছতা অথবা যে কোনও অভিযানের দিন দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে নজরদারি এজেন্সির প্রতিনিধিরা থাকেন। কোনও স্টেশনে নির্দেশ অমান্য হতে দেখলেই সেই ছবি মোবাইলে তুলে সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রেলের বিভিন্ন ডিভিশনের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপেই ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করতে হয় আধিকারিকদের। এনজেপির স্টেশন ম্যানেজার অজিতেশ দাস জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত স্টেশনে বিভিন্ন পর্যায়ে সাফাই চলেছে। আজ, সোমবার ‘স্বচ্ছ রেলগাড়ি’ দিবস রয়েছে। আসা-যাওয়া করা প্রতিটি ট্রেনের সব কামরায় যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রয়েছে কিনা তার দিকে নজর রাখরা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy