ধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে ধর্ষিতার বৃদ্ধ শ্বশুরকে রাস্তায় পেয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে। ধর্ষণে অভিযুক্ত ফেরার তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধকে ভিটেমাটি ছাড়া করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
শুক্রবার রাতে তপনের উত্তর বজ্রপুকুর এলাকায় ওই ঘটনা ঘটার পর, শনিবার সকালে ওই বৃদ্ধ থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তাঁকে রিসিভ-কপি দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। বধূকে ধর্ষণের ঘটনায় ফেরার ওই তৃণমূল সমর্থকরা প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরফলে কুঁড়ে ঘরের বাসিন্দা ধর্ষিতার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান বলেন, ‘‘এলাকায় পুলিশ পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তপন থানা থেকে ঘটনাটি কেন জানানো হল না, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ‘‘মামলাটিতে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি পলাতক অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশকে তল্লাশি অভিযান জারি রাখতে বলা হয়েছিল। বিষয়টি দেখছি।’’
গত ১৪ এপ্রিল গভীর রাতে তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর তপনের নেতা শঙ্কর মণ্ডলের অনুগামী এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বিরুদ্ধ সত্যেন রায় গোষ্ঠীর একদল তৃণমূল কর্মী চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এলাকার তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর অভিযোগ তুলে ৮ জনের ওই দুষ্কৃতী দল তাঁর বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে রক্ষা পান গৃহকর্তা। এরপর শিশুকন্যার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে অভিযুক্ত রাণা তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই বধূ পরদিন তপন থানায় ৮ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।
চাপে পড়ে পুলিশ মূল অভিযুক্ত রাণার বিরুদ্ধে হামলা ও ধর্ষণ এবং বাকি সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বাড়িতে সশস্ত্র হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ মামলা দায়ের করে। কিন্তু অস্ত্র আইনে কোনও মামলা রুজু করা হয়নি বলে অভিযোগ। এরপরও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকায়, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য অভিযুক্তদের লাগাতার চাপ ও হুমকির জেরে নির্যাতিতা মহিলা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। তার স্বামী ওই তৃণমূল কর্মী আজও এলাকা ছাড়া।
এদিন তিনি ফোনে অভিযোগ করেন, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা রয়েছেন। রাতে বাবা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে অভিযুক্তদের মুখোমুখি পড়ে যান। এরপরই তারা বাবাকে মারধর করে মামলা তুলে নিতে বলে। না হলে গ্রাম ছাড়া করবে বলে হুমকি দেয়। খবর পেয়ে তপন থানায় ফোন করে বিষয়টি জানানোর পর তদন্তের আশ্বাস দিলেও কোনও পদক্ষেপ করেনি পুলিশ। তাঁর আরও অভিযোগ, শেষপর্যন্ত পুলিশ ওই মামলায় একজনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা এখনও অধরা। ফলে ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছেন না তারা।
এর আগে ওই নির্যাতিতা পরিবারের অসহায় পরিস্থিতির কথা সামনে আসতেই বালুরঘাট থেকে এলাকায় যান আরএসপির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী। তিনি বিডিও এবং থানার ওসির সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হন। ওই সময় তাঁদের কাছে পেয়ে ধর্ষিতার বৃদ্ধ শ্বশুর প্রমাণ-স্বরূপ ঘটনার দিন বৌমার পরনের শাড়ি কাপড় হাতে নিয়ে তপন থানায় জমা দেন। জেলা তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র থেকে সত্যেন রায় অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়ার পরে পুলিশ নড়ে বসে এবং হামলা ও ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী রাণা ওরফে বিপ্লব চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে সে জেল হেফাজতে।
এদিন জোটের বাম প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী ঘটনার খবর পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব বলে ঘটনাটি হালকা করতে, শুরুতে পুলিশ দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও বাকিদের ধরতে কোনও তৎপরতা দেখাচ্ছে না। ফলে ফেরার অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়ানোয় একমাস ধরে অসহায় ওই পরিবারটি ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছে। এসপির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব। না-হলে বড় আন্দোলন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy