পৌষপার্বণের উৎসবের সময়ে ঘরে ঘরে গিয়ে রাজবংশীদের বোঝানো, বনবাসী কল্যাণ আশ্রম ও একল স্কুলের মাধ্যমে জনজাতি সমাজের মধ্যে প্রচারের উদ্যোগ— আপাতত এই দুই পথে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে পথে নামতে চলেছে আরএসএস। তাদের মূল লক্ষ্য, জলপাইগুড়ি জেলার কৃষি এবং চা বলয়।
গত কয়েক বছর ধরে জলপাইগুড়ি জেলার রাজবংশী এবং জনজাতি সমাজে সঙ্ঘ পরিবার নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে বলে দাবি করে। গত লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রায় ২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়কে সেই প্রভাবের প্রমাণ বলেও দাবি করেন সঙ্ঘের কার্যকর্তারা। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে রাজবংশী এবং জনজাতি, দুই সমাজেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নিজেদের মতো করে প্রচার সারলেও সামান্তরাল ভাবে ক্ষত মেরামতিতে উঠে পড়ে লেগেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।
কী ভাবে মেরামত করা যাবে ক্ষত?
সূত্রের খবর, পুরোটাই গোপন ‘অপারেশনে’র ঢঙে করা হচ্ছে। সরাসরি আরএসএসের কার্যকর্তারাই বাড়ি বাড়ি বোঝাতে যাবেন, এমন নয়। জলপাইগুড়ি জেলার প্রায় সব গ্রামেই আরএসএসের শাখা হয়। তা ছাড়াও সাপ্তাহিক মিলন উৎসবও হয়ে থাকে। সপ্তাহে রবিবার বা অন্য দিন বেছে নিয়ে সে দিন সকলে জড়ো হয়ে নানা আলোচনা, চা-শিঙাড়া বা খিচুড়ি খাওয়া হয়। এই মিলন উৎসবগুলিতে ভাল ভিড় হয় বলে দাবি সঙ্ঘের। যাঁরা এই মিলন উৎসবের পরিচিত মুখ, তাঁদেরকেই বাড়ি বাড়ি যেতে বলা হয়েছে। পৌষ সংক্রান্তির উৎসব রাজবংশীদের ঘরে-ঘরে পালন করা হয়। পৌষ মাস জুড়ে রোজই বিভিন্ন বাড়িতে পুজোআর্চা হয়। সঙ্ঘের প্রচারকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সে দিন দৈনন্দিন পুজোর প্রসাদ চেয়ে খেতে। তার পরে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনা করতে। হিন্দু আবেগ উস্কে দিতেই প্রসাদের সঙ্গে প্রচার জুড়ে দেওয়া হয়েছে চা বলয়ে, দাবি বিজেপির।
চা বলয়েও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে শুরু হয়েছে ক্ষোভ। চা বলয়ে আরএসএসের হাতিয়ার একল স্কুল। এক শিক্ষকের এই স্কুলগুলিতে কোনওরকম ফি ছাড়াই পড়ানো হয়। এই স্কুলের শিক্ষকদের পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে অথবা অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চা বলয়ে বিল নিয়ে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে বনবাসী কল্যাণ আশ্রমকেও। এই আশ্রমগুলি থেকে নিখরচায় ওষুধ-পথ্য বিলি করা হয়। ওষুধ বিলির সঙ্গে নাগরিকত্ব বিল নিয়েও প্রচারের নির্দেশ দিচ্ছে আরএসএস। সঙ্ঘের এক উত্তরবঙ্গের কার্যকর্তার কথায়, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই বিল চাইছিলাম। হিন্দুদের যে ভারত ছাড়তে হবে না, সে কথা বিলে বলা হয়েছে। হিন্দু পরিবারগুলিকে আমরাই সে কথা জানাব।”
সঙ্ঘের কর্মসূচির কিছু কিছু কানে গিয়েছে তৃণমূল নেতাদেরও। সঙ্ঘের কার্যকর্তাদের একাংশের দাবি, তাঁদের পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছে রাজ্য, সিভিক দিয়েও নজরদারি চালানো হচ্ছে। সেই রিপোর্ট পৌঁছেছে তৃণমূলের কাছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, ‘‘একল স্কুলগুলি থেকে ধর্মের জিগির তোলা হয়। নাগরিক বিল নিয়ে বিভাজনমূলক প্রচার করছে আরএসএস। আমরা পাল্টা প্রচার চালাচ্ছি।’’