E-Paper

দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন একাধিক পুজোয়

রাজশাহীর তাহেরপুরে রাজা কংসনারায়ণ ছিলেন বাংলার বারো ভুঁইয়ার এক জন। কংসনারায়ণের বংশের একটি শাখার উত্তরাধিকারীদের বাস জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ায়।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:২৬
জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির প্রতিমা।

জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির প্রতিমা। ছবি - সন্দীপ পাল।

সর্ষে দিয়ে ইলিশ মাছ, চিতল মাছের মুইঠ্যা, বোয়াল মাছের রসা, পুঁটি মাছের ঝোল, আড় মাছের ঘন লাল কালিয়া। রান্নায় একেবারেই পেঁয়াজ-রসুনের ছোঁয়া থাকবে না। কারণ, সবই নিবেদন করা হবে দেবী দুর্গাকে। জলপাইগুড়ির একাধিক পুজোয় আমিষ ভোগ নিবেদনের রেওয়াজ রয়েছে। আমিষ ভোগ বলা হলেও কারও কারও মতে নিরামিষ ভাবে রাঁধা মাছের পদ দেওয়া হয় ভোগে। সে কারণে মাছের নিরামিষ পদও বলে দাবি করেন অনেকে। তবে নিরামিষ-আমিষের তত্ত্ব নয়, প্রতিটি পুজোর ভোগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্য। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার পাতে থাকে চিতল মুইঠ্যা, যোগমায়া কালীবাড়ির দুর্গাপুজোয় ভোগ দেওয়া হয় আড় মাছের কালিয়া দিয়ে, বারো ভুঁইয়ার এক ভুঁইয়ার বংশের দেবীকে মুড়িঘণ্ট নিবেদন করা হয়। চাই বোয়াল মাছের মাথা।

রাজশাহীর তাহেরপুরে রাজা কংসনারায়ণ ছিলেন বাংলার বারো ভুঁইয়ার এক জন। কংসনারায়ণের বংশের একটি শাখার উত্তরাধিকারীদের বাস জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ায়। দেশভাগের সময় ময়মনসিংহ ছেড়ে চলে আসে পরিবার। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন অষ্টধাতুর নয়, ইঞ্চিখানেক লম্বা দুর্গা প্রতিমা। সে পুজো এখনও হয় পুরনো ঐতিহ্য মেনে। সপ্তমী-অষ্টমীতে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। সাদা ভাত, খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, পাঁচ রকম তরকারি, পাঁচ রকম মিষ্টি। নবমীতে মুড়িঘণ্টের ধাঁচে তৈরি একটি পদ, তাতে বোয়াল মাছের মাথা চাই-ই। নবমীর ভোগপদে থাকতে হবে বোয়াল মাছও। বোয়াল মাছ না পেলে, ইলিশ মাছ। দশমীতে কচুশাক হয় ইলিশের মাথা দিয়ে। পরিবারের এক সদস্য অর্ঘ্য চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাদেশে পুজো হয়েছিল, সেখানে বোয়াল মাছ পাওয়া এমন কোনও ব্যাপারই নয়। তবে পুজোর সময়ে এ দিকে অনেক সময় বোয়াল মেলে না।”

বৈকুণ্ঠপুরের রাজবাড়িতে ভোগের কাতল মাছ রান্না হয় টোম্যাটো দিয়ে। পুঁটি মাছ থাকতেই হবে ভোগের পদে। চিতল মুইঠ্যা, ইলিশ সর্ষে তো থাকেই। রাজবাড়ির পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, “কোনওটাই ঝোল-অম্বল হয় না, কালিয়া, রসা এমন পদ হয়।” পুরোহিত শিবু ঘোষালের স্ত্রী রাঁধেন রাজবাড়ির দুর্গার ভোগের নানা পদ।

জলপাইগুড়ির অন্যতম প্রাচীন যোগমায়া কালীবাড়িতেও আমিষ পদের ভোগ দেওয়া হয়। মন্দির কমিটির সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাতলা, বোয়াল, আড় থাকবেই। বিশেষ রন্ধনপ্রণালী অনুসরণ করা হয়। যিনি রাঁধেন, তিনি মুখে কাপড় বেঁধে রাঁধেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri Durga Puja 2024

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy