সুনীল সাহা
নোট বাতিলের গেরোয় কমেছে বিক্রি। তার উপরে বেসরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের টাকা মেটানো চাপ। এই দু’য়ের জাঁতাকলে পড়ে মানসিক অবসাদে এক মুরগি ব্যবসায়ী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার মালদহের হবিবপুর থানার বুলবুলচণ্ডীর রাইসমিল পাড়ার ঘটনা। মৃতের নাম সুনীল সাহা (৩৫)।
সুনীলবাবু বুলবুলচণ্ডী স্ট্যান্ডে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতেন। তাঁর তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে। মৃতের স্ত্রী রেখাদেবী বলেন, ‘‘বেসরকারি সংস্থা থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ব্রয়লার মুরগির দোকান খুলেছিলাম। মুরগির মাংস বিক্রি করে কিস্তির মাধ্যমে ঋণের টাকা শোধ করতাম। তবে নোট বাতিলের ফলে মাংস বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছে। যার জন্য এ বার কিস্তির টাকা জোগাড় করতে পারেনি আমার স্বামী।’’ তিনি জানান এ দিকে, কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে ওই সংস্থা। সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে এ দিন গলায় ফাঁস দিয়ে স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন রেখাদেবী। যদিও এখনও থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, অভিযোগ পেলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটির ঘরে বসবাস করেন সুনীলবাবু। আগে শ্রমিকের কাজ করতেন। মহিলাদের স্বর্নিভর হওয়ার জন্য এক বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ দেওয়া হয়। গত ১৮ মে ওই সংস্থা থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্বামীকে ব্রয়লার মুরগির দোকান খুলে দিয়েছিলেন রেখাদেবী। মোট ২৪টি কিস্তির মাধ্যমে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে ওই বেসরকারি সংস্থাকে। জানা গিয়েছে, ১৫ দিন অন্তর ১১৪০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। পরিবারের দাবি, মুরগির মাংস বিক্রি করে সংসার চালিয়ে অনায়াসে ১৩টি কিস্তি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে নোট বাতিলের ফলে মাস খানেক ধরে মাংস বিক্রি কমেছে। মাংস বিক্রি করে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কিস্তির টাকা জোগাড় করে এদিন দিতে না পারায় ওই বেসরকারি সংস্থার এক কর্মী চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, এ দিন দুপুর ১২টা থেকে বকেয়া টাকার দাবিতে বাড়িতে বসে ছিলেন ওই সংস্থার এক কর্মী। ওই কর্মী বাড়ির বাইরে গেলে ঘরে গিয়ে গলায় মাফলার দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন সুনীলবাবু। পরিবার ও স্থানীয়েরা জানতে পেরে তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে নিয়ে যান বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই বেসরকারি সংস্থার বুলবুলচণ্ডী শাখার ম্যানেজার মাধবচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘চাপ দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়ম অনুযায়ী কিস্তির টাকা চাওয়া হয়েছিল। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’’ এ দিকে, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে মালদহ মেডিক্যালে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এর আগে কালনার এক চাষি শিবপদ মাইতিও নোট বাতিলের ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি উঠেছিল। সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পেরে তিনি আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy