Advertisement
E-Paper

সব ধর্মের একই সুর

একই মঞ্চ থেকেই কারবালা মসজিদের ইমাম জানিয়ে দিলেন, বিজয়া-দশমী আর মহরমের আশুরায় কোনও ভেদ নেই। দু’টিতেই অন্যায়কে হারিয়ে শুভশক্তির জয় হয়। গুরুদ্বারের প্রতিনিধি জানালেন, মহরমের তাজিয়া দেখতে তাঁরাও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১৭

মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বার-গুম্ফার প্রার্থনাকে এক সুরে বেঁধে দিল শিলিগুড়ি পুলিশ।

একই মঞ্চ থেকেই কারবালা মসজিদের ইমাম জানিয়ে দিলেন, বিজয়া-দশমী আর মহরমের আশুরায় কোনও ভেদ নেই। দু’টিতেই অন্যায়কে হারিয়ে শুভশক্তির জয় হয়। গুরুদ্বারের প্রতিনিধি জানালেন, মহরমের তাজিয়া দেখতে তাঁরাও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন। গৈরিক বসন পরা পুরোহিত বললেন, ‘‘আজানের সুরেও সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়। মন্দিরের মন্ত্রোচ্চারণেও তাই।’’ সম্প্রীতির এমনই নানা টুকরোয় গাঁথা হল শিলিগুড়ি পুলিশের ঘণ্টা তিনেকের অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজো এবং মহরমের পরে সকলকে শুভেচ্ছা জানাতে এবং পুজো-মহরম কমিটি সহ ফুলপাতি অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পুরস্কৃত করতে বুধবার বর্ধমান রোডের একটি ভবনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শিলিগুড়ি পুলিশ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘কর্মসূত্রে রাজ্যের অনেক প্রান্তে থেকেছি, সেখানেই সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত দেখেছি। তবে শিলিগুড়ি আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখানে মহরমের তাজিয়া দেখতে রাস্তায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারাই ভিড় বেশি করেন। হাসমি চকে মহরম কমিটির মুসলিম যুবকদের দাঁড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রাকে পথ দেখাতে দেখেছি।’’ বিসর্জন এবং মহরম নিয়ে যে শিলিগুড়িতে কোনও বির্তক নেই, তা পুলিশের তরফে আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। মহরমের দিন প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা করতে চেয়ে কোনও পুজো কমিটি পুলিশকে আবেদন জানায়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, ‘শহর শিলিগুড়ি’র এই ঐতিহ্যকে মর্যাদা দিতেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বার-গুম্ফা সব ধর্মীয় স্থানের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। সকলেই এসেছিলেন।

কারবালা মসজিনের প্রধান ইমাম কাজি মৌলানা খলিলুল রহমান বক্তৃতায় বলেন, ‘‘মহরম এবং দশমী দুই তিথি কাছাকাছি আসা মানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকেও কাছাকাছি আসার বার্তা দেওয়া। অশুরার দিন অন্যায়কে হারিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় বলে মহরম হয়, দশমীতেও অশুভশক্তিকে বধ করা হয়। কাজেই কোনও ফারাক নেই। শিলিগুড়ির মানুষ এটা খুব ভালই জানেন।’’ মহরম কমিটি এ বছর এক হিন্দু ছেলের চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলে দিয়েছে তাও মঞ্চ থেকে জানান পুলিশ কমিশনার। ইসকন মন্দিরের সন্ন্যাসী নামকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি পুলিশ আজকে এই মঞ্চকে পবিত্র করে দিয়েছে। আগামী দিনে এই মঞ্চই দেশের সর্বত্র উদাহরণ হয়ে উঠবে এই কামনা করি।’’ ফাদার বিটি জোসও সব ধর্মের বাসিন্দাদের একসঙ্গে একমঞ্চে নিয়ে আসার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।

এ দিন পুলিশের তরফে সেন্ট্রাল কলোনি, সুব্রত সঙ্ঘ, রবীন্দ্র সঙ্ঘ, শিলিগুড়ি সঙ্ঘশ্রী পুজো কমিটি এবং খালপাড়া মহরম কমিটি, রাজাহোলি কমিটি, সাউথ কলোনি গোয়ালাপট্টি, নূর-ই মসজিদ মহরম কমিটি সহ একাধিক কমিটিকে পুরস্কৃত করেন। ফুলপাতি উৎসবের জন্য ভানুভক্ত ফুলপাতি সমিতি সহ অন্যান্যদেরও পুরস্কৃত করেন। অনুষ্ঠানের শেষে সব কমিটির সদস্য এবং সব ধর্মের প্রতিনিধিদের মঞ্চে ডেকে নেন কমিশনার সহ পুলিশ কর্তারা। খচাখচ শাটার পড়তে থাকে। ক্যামেরা-মোবাইলে বন্দি হতে থাকে এ দিনের অনুষ্ঠানের থিম ছবি।

Communal Harmony Hindu Muslim Durga Puja Muharram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy