Advertisement
E-Paper

ট্রেনের ধাক্কায় মৃত মা, তিন ছেলে-সহ ৬

রেল লাইন পেরোলেই পাশের গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি। মেয়ে ও চার নাতিকে নিয়ে সেখানেই যাচ্ছিলেন বিহারের বাসিন্দা আলিফ নুর বিবি। কিন্তু পথেই হল বিপত্তি। ঘুর পথে না গিয়ে চটজলদির রাস্তাই তাঁদের বিপদ ডেকে আনল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৫
কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছে আসফাক শেখ। দুর্ঘটনার পর থেকেই চুপ করে গিয়েছে বালকটি। ছবি: বাপি মজুমদার।

কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছে আসফাক শেখ। দুর্ঘটনার পর থেকেই চুপ করে গিয়েছে বালকটি। ছবি: বাপি মজুমদার।

রেললাইনের উপর দিয়ে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে যেতে গিয়ে শুক্রবার এনজেপি-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মারা গেলেন তিন মহিলা ও তিন শিশু। তাঁদের সঙ্গে ছিল বালক আসফাক শেখও। ট্রেন আসছে দেখে সে ঝাঁপিয়ে খালের জলে পড়ে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু ট্রেনের সামনে থেকে সরার সময় পাননি আসফাকের মা মানিজাবিবি (৩০), তিন ভাই ওয়াসিম শেখ (৭), নাসিম আলি (৬), শেখ আসিল (৪), দিদিমা আলিফনুরবিবি (৫৫) এবং আলিফনুরবিবির ভাইয়ের স্ত্রী আসিয়াবিবি (৪০)।

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের লোটোরা-ধনেপাড়ায় আসিয়াবিবির বাড়িতেই বেড়াতে এসেছিলেন এখন বিহারের গোসাইপুরের বাসিন্দা আলিফনুরবিবি, তাঁর মেয়ে ও চার নাতি। এ দিন সকাল সওয়া আটটা নাগাদ তাঁরা রেললাইনের অন্য পাশে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। লাইন পার করার জন্য এখানে একটি রেলগেট রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে না গিয়ে লাইন ধরেই হাঁটছিলেন তিন মহিলা ও আসফাক। তিন মহিলার কোলেই ছিল মাজিয়াবিবির তিন সন্তান। সামনেই পড়ে কালকুশ খাল। সেখানে লাইনের উপরে একটি লোহার পাত ফেলে রাখা আছে। তার দু’পাশ ফাঁকা। সেই পাতটির উপর দিয়েই হাঁটার সময় পিছন থেকে ট্রেনটি চলে আসায় পাশে সরে যেতেও পারেননি আলিফনুররা। ট্রেনের ধাক্কায় তিন শিশুকে নিয়ে তিন মহিলা ছিটকে পড়েন খালের জলে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই ছয় জন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের পরে তাঁদের দেহ সন্ধ্যায় পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

আসফাক এই ঘটনার পর থেকে এক রকম চুপ করে গিয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরে বেড়াতে আসার আগে তার বাবা তাকে নতুন গেঞ্জি আর প্যান্ট কিনে দিয়েছিলেন। সেই পরেই এ দিন মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছিল সে। সেই জামাপ্যান্ট ছাড়তে চায়নি দিনভর। কিছু খেতেও চায়নি সারা দিন। ঘুমোতেও পারছে না। চোখ বুজলেই ভেসে উঠছে ট্রেনের এগিয়ে আসার দৃশ্য। তারপরে সে জলে ঝাঁপ দেওয়ার পরেই খালে এসে পড়ল এক এক করে মা দিদিমা, ভাইদের দেহ।

দুর্ঘটনার কথা পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কানেও। জেলার মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর দাবি, ‘‘রেলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। রাজ্যের তরফে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’ তবে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব জানান, রেলকর্মীদের ব্যবহারের জন্যই লাইনের উপরে ওই পাতটি রাখা আছে। ওখানে অন্য কারও ওঠারই কথা নয়। তিনি বলেন, ‘‘তাই ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও এক্ষেত্রে রেলের কোনও গাফিলতি নেই।’’

harishchandrapur rail crossing unmanned rail crossing malda train accident train run over 5 dead
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy