Advertisement
E-Paper

ডানায় যন্ত্র, উড়ল শকুন

বন দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দশকে গোটা বিশ্বে বিভিন্ন প্রজাতির শকুন কার্যত অবলুপ্তির পথে চলে গিয়েছে। এর কারণ পশুর শরীরে দেওয়া ভ্যাকসিন ডাইক্লোফেনাক গোত্রের ওষুধকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৪২
উড়াল: অবশেষে উড়ল শকুন। রাজাভাতখাওয়ায়। নিজস্ব চিত্র

উড়াল: অবশেষে উড়ল শকুন। রাজাভাতখাওয়ায়। নিজস্ব চিত্র

প্রজনন কেন্দ্র থেকে আকাশে শকুন উড়িয়ে দেশের মধ্যে গোটা দেশে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল রাজাভাতখাওয়া। মঙ্গলবার রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে ছ’টি শকুনকে ছাড়া হয়। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই শকুনগুলির মধ্যে দু’টির পিঠে রেডিয়ো ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে। এর ফলে সেই শকুনগুলি কত দূরে উড়ে যাচ্ছে, কোথায় বাসা করছে— সব তথ্য বন দফতরের হাতে আসবে। তার ভিত্তিতে বনকর্তারা বুঝতে পারবেন, কোন এলাকা শকুনের বাসযোগ্য। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল পর্যন্ত তিনটি আকাশে উড়ে গিয়েছে। বাকি তিন শকুনও দ্রুত উড়ে যাবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের। বনকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগে হরিয়ানার পিঞ্জরের একটি প্রজনন কেন্দ্র থেকে আকাশে শকুন ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু রেডিয়ো ট্রান্সমিটার সহযোগে শকুন ছাড়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম।

বন দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দশকে গোটা বিশ্বে বিভিন্ন প্রজাতির শকুন কার্যত অবলুপ্তির পথে চলে গিয়েছে। এর কারণ পশুর শরীরে দেওয়া ভ্যাকসিন ডাইক্লোফেনাক গোত্রের ওষুধকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। শকুনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে দেশের কয়েকটি জায়গার সঙ্গে রাজাভাতখাওয়াতেও প্রজনন কেন্দ্র তৈরি করা হয়। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি ফর প্রটেকশন অব বার্ডসের আর্থিক সহযোগিতায় ২০০৬ সালে এই কেন্দ্র চালু হয়। এর দায়িত্ব নেন মুম্বই ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা। এ দিন রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল বলেন, ‘‘শকুন কমে যাওয়ায় তরাইয়ের বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়ছিল। প্রজনন কেন্দ্র থেকে শকুনদের ফের প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়ায় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের উপকার হবে।’’

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রে স্ল্যান্ডার বিল্ড, লং বিল্ড, হোয়াইট ব্যাক বিল্ড ও হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির ১৩১টি শকুন রয়েছে। যার মধ্যে ৬৭টি শকুনের জন্ম হয়েছে এই প্রজনন কেন্দ্রতেই। মঙ্গলবার যে ছ’টি শকুনকে ছাড়া হয় সেগুলির প্রত্যেকটি হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির। অক্টোবরের শুরুতেই এই ছ’টি শকুনকে বালা নদীর ধারে রিলিজ অ্যাভিয়ারিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানের দু’টি শকুনের পিঠে প্ল্যাটফর্ম ট্র্যান্সমিটার টার্মিনাল ডিভাইজ় লাগানো হয়। বাকি চারটি প্রজাতির পাখায় ট্যাগ লাগানো রয়েছে। বনকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত একশো বর্গ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত শকুন ঘুরে বেড়ায়।

এ দিন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ রিলিজ অ্যাভিয়ারির দরজা খোলা হয়। সেই মুহূর্তে সেখানে বনমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ, উত্তরবঙ্গে মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত-সহ অন্য বনকর্তারা। বনমন্ত্রী জানান, পর্যায়ক্রমে এই প্রজনন কেন্দ্র থেকে আরও শকুন ছাড়া হবে। তবে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে সেখানে থাকলেও খাঁচা থেকে বেরিয়ে শকুনের আকাশে উড়তে দেখার সাক্ষী অবশ্য হতে পারেননি বনমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে থাকা বিধায়ক প্রবীর ঘোষালকে বলতে শোনা যায়, ‘‘শকুনকে আকাশে উড়তে দেখার সাক্ষী হতে পারলাম না।’’

বনমন্ত্রী যাওয়ার পর একটি শকুন উড়ে যায়। বিকেলে ওড়ে আরও দু’টি। মুম্বই ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটির সহ-অধিকর্তা সচিন রানাডে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কথা ভেবেই হয়তো বাকি তিনটি শকুন আকাশে উড়তে দেরি করছে। তবে দ্রুত তারা আকাশে উড়বে বলেই আমাদের আশা।’’ এ দিন বনমন্ত্রী আরও জানান, আগামী জানুয়ারি মাসেই পাতলাখাওয়ার জঙ্গলে দু’টি গন্ডার ছাড়া হবে।

Vulture Breeding Center
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy