Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

লালে এত অ্যালার্জি? সরকারি আবির শুধুই সবুজ!

ভোট বড় বালাই। দোলের দিন তাই আবিরের রং নিয়ে ছুৎমার্গ দেখালেন না ডান-বাম-মধ্যপন্থী কোনও শিবিরের নেতাই। কিন্তু সবই যে আসলে ভোটবাজারের ভেলকি, বন দফতরের তৈরি ভেষজ আবিরের রং দেখলেই সে কথা স্পষ্ট। বিরোধীদের অভিযোগ অন্তত তেমনই।

ভেষজ আবির। নিজস্ব চিত্র।

ভেষজ আবির। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

ভোট বড় বালাই। দোলের দিন তাই আবিরের রং নিয়ে ছুৎমার্গ দেখালেন না ডান-বাম-মধ্যপন্থী কোনও শিবিরের নেতাই। সবুজ শিবিরের নেতা লাল আবির মাখলেন অক্লেশে। সারা জীবন লাল ঝান্ডা ধরে অভ্যস্ত নেতাও সবুজ আবিরে কোনও অ্যালার্জি দেখালেন না। কিন্তু সবই যে আসলে লোকদেখানো, বন দফতরের তৈরি ভেষজ আবিরের রং দেখলেই সে কথা স্পষ্ট। বিরোধীদের অভিযোগ অন্তত তেমনই। রাজ্যের বন দফতর সবুজ আবির আর কমলা-গেরুয়ার মাঝামাঝি একটা রঙের আবির ছাড়া অন্য কোনও আবির তৈরিই করেনি। শাসক দলকে খুশি রাখতেই লাল, গোলাপি বা হলুদ আবির তৈরি করা হয়নি, অভিযোগ বিরোধীদের।

গত কয়েক বছর ধরেই দোলের সময় ভেষজ আবির তৈরি করছে রাজ্যের বন দফতর। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু সবুজ আর কমলা ছাড়া অন্য কোনও রঙের আবিরই থাকবে না! গোলাপি নেই, লাল নেই, নিদেন পক্ষে হলুদ— তাও নেই। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি— সব দল বলছে, তৃণমূলের পতাকায় যে রং নেই, বন দফতরের আবিরেও সে রং নেই। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “বাম আমলে আমরাই এই আবির তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। বাজারের চাহিদা মতো সমস্ত রঙের আবির তৈরির ভাবনা ছিল। এখন ওই আবিরের রং নির্বাচন নিয়েও রাজনৈতিক সংকীর্ণতা চলছে। লাল, গোলাপি আবিরের চাহিদা বরাবর বেশি। কিন্তু তাকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক পরেশ অধিকারী বলেন, “রঙের উৎসবের রং নির্বাচন নিয়ে এমন রাজনীতি আগে হয়নি।”

বিজেপির অভিযোগ, ভোট প্রচারের ভাবনা থেকেই শাসকদলের পছন্দের রঙ হিসাবে সবুজ আবিরের উৎপাদনেই মূলত জোর দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভেষজ আবির ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠায় এ ভাবেই কৌশলে সবুজ আবির তুলে দেওয়ার ছক করা হয়। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “শাসকদল ইচ্ছা করেই সবুজ আবির উৎপাদনে জোর দিয়েছে। ভোট প্রচারে ওই আবির কিনে ব্যবহার করে ওরা বাংলাকে সবুজ করতে চাইছেন। আখেরে অবশ্য লাভ হবে না। এবার ভোটে রাজ্যে গেরুয়া ঝড় উঠবে।” একই ভাবে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আগে প্রকাশ্যে একাধিকবার জানিয়েছেন, হলুদ রঙের প্রতি সমর্থকদের দুর্বলতার কথা। এ বার নিউকোচবিহার রেল স্টেশনে অবরোধের পর দলের নেতা বংশীবদন বর্মন বেপাত্তা। অন্য নেতারাও গ্রেফতার হয়েছেন। তাই তাঁদের সমর্থকদের অনেকের মধ্যেই উৎসবের আমেজ নেই। তাঁদের কয়েকজন অবশ্য বলেন, তবু হলুদ ভেষজ আবির না থাকাটা মেনে নিতে পারছি না। যারা ক্ষমতায় থাকবে তারাই কি রং ঠিক করবে?

তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে চায়নি। শাসক শিবিরের বক্তব্য, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই বন দফতরের উদ্যোগে প্রথম ভেষজ আবির তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালে দুই কুইন্ট্যাল ভেষজ আবির তৈরি হয়। তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিতে ভাল সাড়া মিলেছে। তারপর থেকেই ফি বছর ভেষজ আবির তৈরি হচ্ছে। গাছের পাতা, কাণ্ড, সবুজ পালং শাক প্রভৃতির মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে সবুজ আবির। অন্য দিকে কমলা লেবুর গুঁড়ো, ভুট্টা, হলুদের গুঁড়ো, গাজর প্রভৃতির মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে কমলা আবির। ওই আবিরের সঙ্গে গোলাপ জল, ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে দিয়ে আবিরকে সুগন্ধি করা হচ্ছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা মাথাভাঙা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “বিরোধীদের কাজ নিছক বিরোধিতা করা। আমাদের আমলেই প্রথম বন দফতরের উদ্যোগে ভেষজ আবির তৈরি হচ্ছে। দুটি রঙের পাঁচশো কেজির বেশি আবির এবারেও হয়েছে। এ জন্য কর্মীদের প্রশংসা করা উচিত।” কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী অবশ্য বলেন, “আবিরের রং নিয়ে সাফাই দিয়ে নির্বাচন জেতা যাবে না।”

বাম-কংগ্রেসের নেতারা অনেক দিন ধরেই আবার অন্য একটা অভিযোগ করছেন। তৃণমূল আর বিজেপি নাকি তলে তলে সমঝোতা করেছে এ রাজ্যে। বন দফতরের আবিরের রঙের দিকে লক্ষ্য করলেও কিন্তু সেই জল্পনা অক্সিজেন পাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে জোট শিবিরের এক নেতার রসিক মন্তব্য, ‘‘সবুজ তৃণমূলের নিজের রং। আর কমলা বা গেরুয়া যা-ই বলুন, ওই আবিরটা আসলে তৃণমূলের তেরঙা পতাকার কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়নি। ওটা বিজেপির জন্য। কেন্দ্রকেও তো খুশি রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

green tmc abir assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE