তালিকায় ‘একলা’ ভোটার খুঁজছে জেলা প্রশাসন তথা নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি বিধানসভার ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ধরে ধরে তেমন ভোটারের খোঁজ চলছে। যে ব্যক্তির বাবা-মা, আত্মীয়-পরিজন কারও নাম তালিকায় নেই, এমন কেউই প্রশাসনের চোখে ‘একলা’ ভোটার। সেই ভোটারদের খুঁজে বার করে তাঁরা আদৌও রয়েছেন কিনা, দেখে তাঁদের বাবা-মায়ের নাম কোন তালিকায় রয়েছে সব যাচাই করতে হবে। সেই ব্যক্তির নাম অন্য কোনও তালিকায় নেই, তা-ও নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার বিধানসভাগুলির সহকারি রির্টানিং অফিসারেরা (এআরও)।
‘একলা’ ভোটারের সঙ্গে দেখতে হবে কারও নাম আচমকা বেশি বয়সে তালিকায় নতুন করে উঠল কিনা। সে ক্ষেত্রেও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করতে হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই এই প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নাম তালিকায় ওঠানো থেকে পদবী বা জন্মতারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে কড়াকড়ি। আধার বা প্যান কার্ড দেখিয়ে জন্মতারিখ পরিবর্তন করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার অন্যতম এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, “কমিশনের নির্দেশ মেনেই তালিকার কাজ করা হয়। সেই মতো কাজ চলছে। কোথাও কোনও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ভোটার তালিকায় ‘ভূতের’ উপদ্রব নিয়ে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের নির্বাচন কমিশন বিবৃতিও দিয়েছে। জেলায় জেলায় তৃণমূলের তরফেও ভোটার তালিকা যাচাই শুরু করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলাতেও তৃণমূলের তরফে প্রাথমিক যাচাই হয়েছে এবং নামের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনও পৃথক ভাবে ভোটার তালিকায় ‘স্ক্রুটিনি’ শুরু করেছে। কমিশনের নির্দেশেই এই কাজ চলছে বলে দাবি। মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার আগে বাড়িতে গিয়ে যাচাই করতে হবে বলেও নির্দেশ এসেছে। এতদিন বিয়ের পরে পদবী পরিবর্তনে বিয়ের কার্ড বা অন্য শংসাপত্র দিলেই কাজ হয়ে যেত। কমিশনের নতুন নির্দেশে, বিয়ের পরে পদবী পরিবর্তন করতে হলে বিয়ের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক। ২১ বছরের বেশি কারও নাম কেন দেরিতে তোলা হচ্ছে, সেই হলফনামা-সহ সেই ব্যক্তির বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের সরকারি প্রমাণপত্র দেখানোও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বয়সের সঠিক প্রমাণপত্রও দিতে হবে।
তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভিন্ রাজ্যেও একই ভোটার কার্ডের নম্বরের ভোটার রয়েছে জেলায় জেলায়। প্রশাসনের নির্দেশ, বাইরের রাজ্য থেকে যদি কেউ জেলায় নাম তুলতে আসেন, তা হলে জেলার ঠিকানার একাধিক প্রমাণপত্র জমা দিতেই হবে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “ভোটার তালিকায় আমরা অনেক গরমিল পাচ্ছি, সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি।” অন্যদিকে, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “তৃণমূল ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়েছে। কমিশনকে দলের তরফ থেকে সব জানানো হয়েছে। কমিশনই এখন ভুয়ো বেছে দিচ্ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)