Advertisement
E-Paper

পতাকা, ফ্লেক্স লোপাটের অভিযোগ বাড়ছে

ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই প্রচারে সরগরম হচ্ছে শহর। আর এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অভিযোগ আর পাল্লা অভিযোগের পর্ব। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দলের তরফে অভিযোগ জমা পড়ছে শিলিগুড়ির পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমা শাসকের দফতরে। কোথাও ফ্লেক্স ছেঁড়া হয়েছে। কোথাও রাতের অন্ধকারে ভেঙে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী দফতর। কোথাও বা আবার ব্যানার, ফেস্টুন লোপাট করা হয়েছে।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৭
নিরঞ্জননগরে সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর।

নিরঞ্জননগরে সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর।

ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই প্রচারে সরগরম হচ্ছে শহর। আর এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অভিযোগ আর পাল্লা অভিযোগের পর্ব। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দলের তরফে অভিযোগ জমা পড়ছে শিলিগুড়ির পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমা শাসকের দফতরে। কোথাও ফ্লেক্স ছেঁড়া হয়েছে। কোথাও রাতের অন্ধকারে ভেঙে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী দফতর। কোথাও বা আবার ব্যানার, ফেস্টুন লোপাট করা হয়েছে।

শাসক এবং বিরোধী প্রত্যেকেরই অভিযোগ, প্রধাননগর, ভক্তিনগর এবং শিলিগুড়ি, প্রায় প্রতিটি থানা এলাকাতেই গভীর রাত থেকে ভোরবেলার মধ্যে এই ঘটনাগুলি ঘটছে। এই অবস্থায় পুলিশকে চিঠি দিয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমা শাসক তথা রিটার্নিং অফিসার দীপাপ প্রিয়া। সেই সঙ্গে কমিশনের একটি দল গড়ে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমা শাসক।

রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ফ্লেক্স ছিড়ে দেওয়া, পতাকা খোলা-সহ রোজই নানা অভিযোগ পাচ্ছি। পুলিশকে চিঠি দিয়ে অভিযোগগুলির সঠিক তদন্ত করতে বলেছি। নজরদারিও বাড়াতে বলা হয়েছে। কমিশনের নজরদারি দলও নানা এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১০ দিনে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের তিনটি থানা মিলিয়ে অন্তত পক্ষে ২০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। শুধু বিরোধীরাই নয়, শাসক দল তৃণমূলের তরফেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। ১২, ৪, ২৮, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ৩৩ নম্বরের ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সমীরণ সূত্রধর বলেন, ‘‘দু’ দফায় আমার ওয়ার্ডে ফ্লেক্স ছিড়ে দেওয়া ও পতাকা খুলে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে বারবার নজরদারি বাড়াতে বলা হচ্ছে।’’ দলের জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমাদের প্রচার সামগ্রী নষ্ট করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করার ঘটনাও ঘটেছে। কমিশন এবং পুলিশকে দলের তরফে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

বামেদের অভিযোগ, পুলি‌শের নজরদারি না থাকায় শহর জুড়ে ভোটে বিরোধীদের দফতরে হামলা ও প্রচার সামগ্রী নষ্ট করার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করে ওই সব করানো হচ্ছে। ৪৬, ৪, ৫, ৩৫, ৩২, ৩৬, ২৪-এর মত একাধিক ওয়ার্ডে ঘটনাগুলি ঘটেছে বলে তাঁদের অভিযোগ। দলের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ তো শাসক দলকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। আমাদের উপর হামলা হচ্ছে, দফতর ভাঙচুর হচ্ছে। আবার আমাদেরই লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কলকাতায় নির্বাচন কমিশনে আমরা সব জানিয়েছি।’’

ভাঙচুর, ফ্লেক্স কাটা বা পতাকা খোলা তো রয়েইছে, বিজেপি আবার ফ্লেক্স লোপাট করে দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছে। দলের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের সেবক রোড লাগোয়া ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারের ফ্লেক্স লোপাট হয়ে গিয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২০টি ফ্লেক্স খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও ৩১, ২৭, ৪৩, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডেও ফ্লেক্স কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন বসু বলেন, ‘‘পুলিশে আমরা অভিযোগও জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থাই হয়নি।’’

পুলি‌শের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত বলে মনে করছেন জেলার কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, ১২, ১৩, ৩, ৪, ৪৬, ৫, ৬-সহ একাধিক ওয়ার্ডে প্রচারের ফ্লেক্স, পতাকা ছেঁড়া হয়েছে। পুলিশ কে জানানো হলেও কোথাও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘বিরোধীদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। পতাকা, ফেস্টুন নষ্ট করে কোনও কোনও দল ভাবছে, ভোটে জিতবে। আর পুলিশ তো সক্রিয়ই হচ্ছে না।’’

বিজেপি কার্যালয়ে ভাঙচুর।

পুলিশ সূত্রের খবর, এবার শহরের যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তিনটির বেশি বুথ থাকছে, তাকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া যে সমস্ত বুথে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে বেশি নজরদারি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। আর প্রচারের ফ্লেক্স ও পতাকা নষ্টের অভিযোগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও নাম থাকছে না। তাই তদন্ত না করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিলিগুড়ি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) ওজি পাল বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ, গোলমালের খবর পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়ে‌ছে। প্রতিটি থানাকে রাতের দিকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।’’

এ দিনই রাতের অন্ধকারে পাশাপাশি দুটি ওয়ার্ডে বিজেপি এবং সিপিএমের দুটি নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার গভীর রাতে নিরঞ্জননগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে উভয়পক্ষই আশিঘর ফাঁড়িতে মঙ্গলবার অভিযোগ জানিয়েছেন। কারও নাম করে অভিযোগ না করলেও বিজেপি’র অভিযোগের তির শাসক দলের কর্মী সমর্থকদের দিকেই। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা অভিযোগ পেয়েছেন। সেই মতো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা আধিকারিককেও জানিয়েছে বিজেপি। সিপিএমের তরফে অবশ্য তাঁদের নিবার্চনী কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়টি এখনও নির্বাচন কমিশনের কাছে জানানো হয়নি। তবে তারাও শীঘ্রই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট চাই। কারও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে ভোট পাওয়া যায় না।’’

বিজেপি’র ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তুফান সাহার অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে তাদের নিরঞ্জন নগরের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেছে এক দল দুষ্কৃতী। তারা পার্টি অফিসে বৈদুতিক বাতিও ভেঙে দেয়। একটি বাঁশে দলের অনেকগুলি পতাকা বাঁধা হয়েছিল। সেই বাঁশটি ভেঙে ফেলে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ১৮২ নম্বর বুথ এলাকায় ওই নিবার্চনী কার্যালয়টি তৈরি করা হয়েছিল। যে কাপড় দিয়ে দলীয় কার্যালয়টি তৈরি হয়েছিল সেটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তুফানবাবু বলেন, ‘‘কারও নাম করে অভিযোগ না জানালেও শাসক দলের কর্মী সমর্থকরা ওই কাজ করেছে বলে আমাদের সন্দেহ। পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে নির্বাচনী আধিকারিককেও জানানো হয়েছে। আমরা চাই শান্তিতে ভোট হোক। কিন্তু রাজ্য জুড়ে শাসক দল তা করতে দিতে চাইছে না। আগে সিপিএমের সন্ত্রাস ছিল। এখন তা বন্ধ।এখন সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল।’’

সিপিএমের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা তাদের নিরঞ্জননগরের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই অস্থায়ী কার্যালয়টি টিনের তৈরি ছিল।টিনগুলি ভেঙে ফেলা হয়েছে। দলের প্রার্থী উত্তম অধিকারীর প্রচারে ফেস্টুনগুলি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পতাকাগুলি খুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী উত্তমবাবু বলেন, ‘‘পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব।’’

—নিজস্ব চিত্র।

SILIGURI MUNICIPALITY POLL siliguri corporation vote 2015 banner flags stealing banners
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy