Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি চাঁচলে

বোরো ধান কাটার প্রাকমুহূর্তে ঝড় ও বৃষ্টির দাপটে মাথায় হাত পড়েছে মালদহের চাঁচল মহকুমার বোরো চাষিদের। কোথাও ঝড়ে ধানের গাছ খেত নুইয়ে পড়েছে, কোথাও ঝড়ে ঝরে পড়েছে সোনালি পাকা ধান। আবার কোথাও খেত প্রায় ডুবুডুবু বৃষ্টির জলে। শনিবার মাঝরাতে মহকুমার বেশ কিছু এলাকায় ঝড় ও বৃষ্টি পাকা ধান কাটার আগে মহকুমার বিভিন্ন এলাকার বহু চাষিকে কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছে।

খেতের অবস্থা। —নিজস্ব চিত্র।

খেতের অবস্থা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

বোরো ধান কাটার প্রাকমুহূর্তে ঝড় ও বৃষ্টির দাপটে মাথায় হাত পড়েছে মালদহের চাঁচল মহকুমার বোরো চাষিদের। কোথাও ঝড়ে ধানের গাছ খেত নুইয়ে পড়েছে, কোথাও ঝড়ে ঝরে পড়েছে সোনালি পাকা ধান। আবার কোথাও খেত প্রায় ডুবুডুবু বৃষ্টির জলে। শনিবার মাঝরাতে মহকুমার বেশ কিছু এলাকায় ঝড় ও বৃষ্টি পাকা ধান কাটার আগে মহকুমার বিভিন্ন এলাকার বহু চাষিকে কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছে। কয়েকদিন ধরেই খেত থেকে বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন চাষিরা। তবে যে পরিমাণ ধান কাটা হয়েছে তা খুব সামান্যই। নতুন ওই ধানের দাম না মেলায় এমতিতেই মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। তারপর কাটার মুখে ঝড় ও বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়ে কার্য়ত দিশেহারা অবস্থা চাষিদের। শনিবার রাতে ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে আমেরও।

কৃষি দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা অনন্তদেব মাইতি বলেন, ‘‘বোরো ধান পেকে গিয়েছে। এই সময়ে ঝড়ে গাছ খেতে নুইয়ে পড়ে বা শিসের ধান ঝরে পড়ে ক্ষতি হবে। এছাড়া খেতে জল জমলে তো আরও বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আজ, সোমবার বিভিন্ন ব্লকের রিপোর্ট পেলেই ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে।’’

শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ প্রথমে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে ঘরবাড়ির সামান্যই হয়েছে। কোথাও ছোট গাছ ভেঙে পড়ার পাশাপাশি মাটির বাড়ির ছাদের টালি ও টিনের চালার কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দু সপ্তাহ আগের মতো প্রবল ঝড়ের দাপট না থাকলেও ওইদিন প্রথমে প্রবল বেগেই ঝড় বইতে শুরু করে। পরে দাপট কমলেও তা দীর্ঘক্ষন ধরে চলতে থাকায় পাকা ধান খেত নুইয়ে পড়ে। একই সঙ্গে রবিবার ভোর পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ায় তুলনামূলক নিচু জমিতে জল দাঁড়িয়ে পড়ে। চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর সহ রতুয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ের সঙ্গে ওই বৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার রাতে ঝড়ে পড়ে গিয়েছে আম। মালদহের চাঁচলে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার প্রথম থেকেই আবহাওয়া বোরো ধানের অনুকূল ছিল না। বেশ কয়েকবার ঝড়ের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে আগেই ধানের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে ফসল মেলে গড়ে সাত থেকে আট কুইন্ট্যাল। গত বছর পরের দিকে কুইন্ট্যাল প্রতি দেড় হাজার টাকাও দাম মিলেছিল। এবার নতুন উৎদিত ওই ধানের দাম গত বুধবার চাঁচল হাটে কুইন্ট্যাল প্রতি সাতশো টাকার বেশি ওঠেনি। অধিকাংশ চাষিই ধারদেনা করে বা মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে চাষ করেন। ফলে কম উৎপাদনের পাশাপাশি দামও কম হওয়ায় পথে বসা ছাড়া পথ নেই বলেই চাষিরা মনে করছেন।

চাঁচলের শ্রীরামপুরের চাষি মধুসূদন মন্ডল দুইবিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘খেতেই ধান নুইয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা তা কাটার জন্য অর্ধেক ফসল দাবি করছে। এখনও দোকান থেকে কেনা সারের টাকা দিতে পারিনি। শেষ সময়ে যা হল তাতে পথে বসতে হবে।’’ আবার উমরপুরের রহিম আলি বলেন, ‘‘তিনবিঘার মধ্যে দুইবিঘায় বৃষ্টির জলে শিস প্রায় ডুবতে বসেছে। কতটুকু ফসল পাব জানি না। তার উপরে দামও নেই। কীভাবে ধারদেনা শোধ হবে জানি না। ভাবছি পরের বার থেকে ভুট্টা চাষ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

storm chanchol farmer malda mango
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE