ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে প্রশাসনিক বিভাগের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে ছাত্রীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
ফের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার জেরে বিক্ষোভে দিনভর কার্যত অচল হয়ে পড়ল ক্যাম্পাসের কাজকর্ম।
অভিযোগ, সোমবার দুপুরে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়। তারপরে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার বেলা ১০টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়। তার আগে ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড, যেখানে সমস্ত বিভাগের চাবি থাকে, সেখানে জড়ো হন গবেষক পড়ুয়ারা। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের একাংশের নেতৃত্বেই প্রশাসনিক ভবনে এ দিন কাউকে ঢুকতে দেননি আন্দোলনকারীরা। ফলে প্রশাসনিক কাজকর্ম এ দিন অচল হয়ে পড়ে।
উপাচার্য বাইরে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশেও অভিয়োগ জানানো হয়েছে। উপাচার্য বুধবার ফিরে সমস্যা নিয়ে ছাত্র, শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’’ সেই মতো নিরাপত্তার সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বেলা ২টো নাগাদ অবস্থান ওঠে। মাটিগাড়া থেকে পুলিশকর্তারা গিয়ে জানান, অভিযুক্তকে ধরার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
অভিযোগ, এর আগেও বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেছে বলে নালিশ করা হলেও কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই। সোমবার দুপুরে ফিজিক্স বিভাগের কাছে যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে মাস কয়েক আগেও এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হয়েছে বলে দাবি। অভিযুক্তের বাইক নম্বরও দেওয়া হয়েছিল। অথচ তাকে ধরা হয়নি। ফের এ ধরনের ঘটনার পরে ছাত্রীদের অভিযোগ, ওই দিন দুপুরে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে কাজ সেরে ফিরছিলেন তিন ছাত্রী। বহিরাগত এক যুবক বাইকে এসে তাঁদের আপত্তিকর কথা বলে। এক ছাত্রীর হাত, পোশাক ধরে টানাটানিও করে বলে অভিযোগ। বাকিরা হইচই করলে সে যুবক বাইক নিয়ে পালায়। নিরাপত্তা কর্মীরা সেখানে ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই নিরাপত্তাকর্মী যাদের থাকার কথা ছিল তাঁদের শো-কজ করা হয়েছে।
তৃণমূলের ছাত্রদের নেতৃত্বে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজকর্ম অচল করে দেওয়া হলে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কেন না সম্প্রতি তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের ছাত্র সংগঠন শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও বন্ধ, অচলাবস্থা তৈরি করবে না। এ দিন টি ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা ছিল। প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান আন্দোলনের জেরে প্রশ্নপত্র নিতে দেরি হয়। তাতে ১ ঘন্টা দেরিতে বেলা ১২ টা নাগাদ পরীক্ষা শুরু হয়। আন্দোলনের জেরে কয়েকটি বিভাগ ছাড়া কোনও ক্লাস হয়নি।
বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকে ‘মাইগ্রেশন’ শংসাপত্র নিতে এসেছিলেন অনেক পড়ুয়া। তাঁদের কাজ না হওয়ায় ফিরে যেতে হয়। টিএমসিপি নেতা তথা রিসার্চ স্কলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাদল রায়, সম্পাদক মোশারফ হোসেন জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন তাঁরা সমর্থন করছেন। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অচল করে কোও আন্দোলন তাঁরাও চান না।
এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতির সম্পাদক রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্যাম্পাস ইনচার্জ প্রণব ঘোষ, ফিনান্স অফিসার প্রদীপকুমার ঘোষরা। পড়ুয়াদের অভিয়োগ, ক্যাম্পাসে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কথা থাকলেও হয়নি। ক্যাম্পাসের পিছনে সীমানা পাঁচিল ভেঙে একাধিক জায়গা দিয়ে যাতায়াত করে লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দারা। কিছু ঘটলে পুলিশ, নিরাপত্তাকর্মীরা পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেই কড়াকড়ি করে। বহিরাগতরা আবাধেই ঢোকে। অভিযোগ, সন্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের ফাঁকা জায়গায় মদ্যপানের আসর বসে। নানা আপত্তিকর কাজকর্মও চলে বলে অভিযোগ। সোমবার দুপুরের ঘটনার পর রাতেও সাড়ে সাতটা নাগাদ গণিত বিভাগের সামনে দু’টি বাইকে করে চার জন বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীর স্ত্রীকে ইভটিজিং করে বলে অভিযোগ। নিরাপত্তা কর্মীরা অভিযুক্তদের ধরে পরে ছেড়ে দেওয়ায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উপাচার্য়ের সঙ্গে বৈঠকে তা জানানো হবে বলে ওই কর্মী জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy