Advertisement
E-Paper

বিএডে ভর্তির তারিখ নিয়ে ক্ষোভ

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি এবং বেসরকারি কলেজে ভর্তির দিনক্ষণে সমন্বয় না থাকার জেরে বিপাকে পড়তে হয়েছে আবেদনকারীদের।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:২৩

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি এবং বেসরকারি কলেজে ভর্তির দিনক্ষণে সমন্বয় না থাকার জেরে বিপাকে পড়তে হয়েছে আবেদনকারীদের।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, চলতি শিক্ষাবর্ষে সরকারি বিএড কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া আবেদনকারীদের তালিকা (মেরিট লিস্ট) প্রকাশের আগেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি শেষ হয়ে যাবে। পড়ুয়াদের দাবি, সরকারি কলেজের ভর্তিতে সুযোগ মিলবে কিনা সেই অনিশ্চয়তায় না থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাধ্য হয়ে ভর্তি হতে হবে। সে ক্ষেত্রে পরে সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ মিললেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য জমা দেওয়া প্রায় ৭৫ হাজার টাকা জলে যাবে বলে অভিযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নির্দেশে ক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা। রাজ্য সরকারের নির্দেশে বছর দুয়েক ধরে বেসরকারি বিএড কলেজের ভর্তির প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভাবে পরিচালনা করছে। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কোচবিহার জেলার ৯টি বেসরকারি কলেজে ভর্তির আবেদন, মেরিট লিস্ট প্রকাশ এবং ভর্তি নেওয়া সবই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করে থাকেন।

গত ২০ মে বেসরকারি কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে মেরিট লিস্ট প্রকাশ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভর্তির শেষ তারিখ আগামী ৪ জুন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বেশির ভাগ সরকারি কলেজে চূড়ান্ত মেরিট লিস্ট প্রকাশ হবে আগামী ৪ জুনের পরে। সে কারণেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আবেদনকারীদের দাবি, ভর্তির এমন নির্দেশে আখেরে লাভ হবে বেসরকারি ক্ষেত্রেরই। কেন না, সরকারি কলেজের আদৌও সুযোগ মিলবে কিনা সেই অনিশ্চয়তায় না ভুগে অধিকাংশ আবেদনকারীই এক বছর নষ্টের আশঙ্কায় বেসরকারি কলেজগুলিতে ভর্তি হবেন। তার ফলে বেসরকারি কলেজে কোনও আসনই ফাঁকা পড়ে থাকবে না। উল্টে কোনও পড়ুয়া প্রথমে ভর্তি হয়ে পরে ছেড়ে দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই জায়গা অন্য আবেদনকারীকে ভর্তি নিতে পারবে। এর ফলে আর্থিক ভাবেও কর্তৃপক্ষ লাভবান হবে।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ৯টি কলেজে মোট ৬৫০টি আসন রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি চারটি কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় তিনশো। সরকারি কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্য সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষই পরিচালনা করে। বেসরকারি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদনকারীকে প্রথমেই প্রায় ৭৫ হাজার টাকা জমা করতে হয়। সরকারি কলেজে এই ভর্তির খরচ দ্বিগুণের কিছু কম। পঠনপাঠনের কম খরচের জন্য এবং পরিকাঠামো, মেধা নানা দিক থেকে পড়ুয়াদের কাছে সরকারি কলেজের চাহিদাই বেশি। জলপাইগুড়ির এবং দার্জিলিঙের সরকারি বিএড কলেজে চূড়ান্ত মেরিট লিস্ট প্রকাশ হবে আগামী ৬ জুন। শিলিগুড়ি বিএড কলেজেও চূড়ান্ত মেরিট লিস্ট প্রকাশ এবং কাউন্সিলিং হবে আগামী ৬ জুন। অথচ তার দু’দিন আগেই বেসরকরি কলেজের ভর্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই আবেদনকারীদের অভিযোগ, এ বছর সরকারি কলেজে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হতে চাইলেও, স্রেফ অনিশ্চয়তা এড়াতে বেসরকারি কলেজে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হবে।

পড়ুয়াদের প্রশ্ন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি এবং সেরকারি ক্ষেত্রে ভর্তিতে কেন সমন্বয় থাকবে না। কেন সরকারি কলেজগুলির কাছে একই সময় ভর্তি প্রক্রিয়া চালানোর আবেদন করবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড পাঠক্রমে ভর্তি কমিটির প্রধান অধ্যাপক দ্যুতিশ চক্রবর্তী এ দিন দাবি করেছেন, সরকারি কলেজের ভর্তির প্রক্রিয়ার কথা আগে জানা ছিল না। দ্যুতিশবাবু বলেন, ‘‘সকলেই সরকারি কলেজে ভর্তি হতে চান এটা সত্যি। বেসরকারি কলেজে আগে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে তাই সমস্যা হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে দেখতে হবে।’’ আগামী সোমবার কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ইতিমধ্যে পড়ুয়াদের চাপে শিলিগুড়ির বিএড কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথম দফায় মেরিট লিস্ট প্রকাশের দিন এগিয়ে দিয়েছে। শিলিগুড়ি বিএড কলেজের অধ্যক্ষ বিভূতিভূষণ সারেঙ্গি বলেন, ‘‘আবেদনকারীদের অনেকেই আমাদের কাছে ভর্তির দিন এগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। সে কারণে ৬ জুনের পরিবর্তে আগামী ১ জুন মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হবে। তবে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে আরও সময় লাগবে।’’ শিলিগুড়ি কলেজ করলেও অনান্য সরকারি কলেজগুলি ভর্তির দিনক্ষণ বদলায়নি। সে কারণে সমস্যা যে তিমিরে ছিল তেমনিই রয়েছে বলে দাবি। সমস্যার কথা স্বীকারও করেছেন ভর্তি পরিচালন কমিটির আরেক সদস্য তথা পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি কলেজগুলিও ভর্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে দিতে পারে। কলেজগুলির সঙ্গে আলোচনা করব।’’ জলপাইগুড়ি সরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষ শুভেন্দু মোদকও বিষয়টি নিয়ে কলেজের অ্যাডমিশন কমিটির সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

যদিও আবেদনকারীদের একাংশের দাবি, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি-বেসরকারি দুই কলেজে কেন ভর্তি নিয়ে প্রথম থেকে সমন্বয় রাখা হয়নি তা খতিয়ে দেখা হোক। ইচ্ছে করেই কী বেসরকারি ক্ষেত্রকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।

Public university Student Hs exam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy