Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Students

বই নয়, হাতে উঠছে কাস্তে

পড়ন্ত বেলায় হেমন্তের রোদে হলুদ রং ধরে, সোনালি ধানের খেতে কাস্তে চালাতে থাকে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রী, প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা কিশোরেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০৫:০২
Share: Save:

নভেম্বর মাসেও চড়া রোদ। কাঁধে বাঁক নিয়ে আলপথ দিয়ে হনহন করে হাঁটছেন এক কিশোর। মাথায় জড়ানো গামছার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে একটি টুপি। বাঁকের দু’ধারে পাকা ধান। সব ঠিক থাকলে এই সময়টা কলেজেই থাকার কথা ছিল ওই কিশোর প্রসেনজিত রায়ের। ডিগ্রি পেতে আর বাকি ছিল এক বছর। কিন্তু করোনার কারণে সেসব এখন দূরের কথা মনে হচ্ছে তাঁর। মুর্শিদাবাদের প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ কলেজ ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে জলপাইগুড়ির বাড়িতে। অনলাইনে ক্লাসও হচ্ছে না। এখন প্রসেনজিতের দিন কাটছে ধানের খেতে।

প্রসেনজিতের বাবা অবিনাশ রায় রাজমিস্ত্রি। নিজেদের চার-পাঁচ বিঘে জমি রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর ধান চাষ করেন। কিছুটা থাকে বাড়ির জন্য, বাকিটা বিক্রি হয়। ওই জমির ধান কাটতে পুজোর পরে কৃষি শ্রমিক নিয়োগ করতেন অবিনাশবাবুরা। তিনশো টাকা চুক্তিতে শ্রমিকরা কাজ করতেন। এ বছর লকডাউনে প্রায় তিন মাস বাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছে অবিনাশবাবুকে। হাতে টাকা না থাকায় কৃষি শ্রমিক নিয়োগের সামর্থ্য নেই। তাই অবিনাশবাবু আর তাঁর ডিএলএড পড়ুয়া ছেলে নিজেই ধান কাটছেন। প্রসেনজিত বলছেন, “পড়াশোনা হচ্ছে না। তাই ধান কাটছি। কলেজ খুললে আবার পড়ব।”

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তোড়লপাড়ার বামনপাড়ার ধান খেতে দেখা মিলল রেখা রায়ের। বেশিরভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। শুকোনোর জন্য খেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। কিছু জমিতে এখনও সোনালি ধান মাথা নাড়াচ্ছে। তেমনিই একটি খেতে কাস্তে নিয়ে ধান কাটছেন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা রেখা। সংস্কৃত স্নাতক নিয়ে জলপাইগুড়ির কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু কবে কলেজ খুলবে জানা নেই, অনলাইন ক্লাসও নেই। রেখার সময় কাটছে এখন ধান খেতে। সংস্কৃতের এই ছাত্রী বললেন, “বাড়িতে সারাদিন বসে কী করব। তাই ধান কাটছি, সময়ও কাটছে।” রেখা-প্রসেনজিতের মতো কৃষি পরিবারের বহু ছেলে-মেয়ের দল এখন কাস্তে হাতে ধানের খেতে কাজে নেমেছেন।

রেখার বাবা বাবলু রায়ের কথায়, “এখন মেয়েটার বই-খাতা নিয়ে কলেজে যাওয়ার কথা ছিল। তা না করে ধান কাটছে। অবশ্য ভালই হয়েছে। লকডাউনে আমার বিমা এজেন্সির কাজ প্রায় বন্ধ। মেয়েটাও আমার সঙ্গে ধান কাটায় একজন শ্রমিকের টাকা বাঁচল।” পড়ন্ত বেলায় হেমন্তের রোদে হলুদ রং ধরে, সোনালি ধানের খেতে কাস্তে চালাতে থাকে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রী, প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা কিশোরেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Distress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE