Advertisement
E-Paper

আগমনীর বার্তায় মোছে না বিষণ্ণতার সুর

দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গেলেও ওরা জানে, এ বছর আর পুজোর বাদ্যি বাজবে না বীরপাড়ার বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। পুজোর বর্ণ-গন্ধহীন ওই বাগানে এ বার শুধুই বিষণ্ণতার একঘেয়ে সুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪২
বিষাদ: ঢেকলাপাড়া বাগানে শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

বিষাদ: ঢেকলাপাড়া বাগানে শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

প্রকৃতি সেজে উঠেছে আগমনীর বার্তা নিয়ে। চা বাগানের আঁকে-বাঁকে হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে কাশ ফুল। এ সমস্ত দৃশ্যেই আরও প্রকট হয়ে উঠছে মুনিয়া, রেখা, বিক্রম, বিজুদের ঘরের অন্ধকার। দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গেলেও ওরা জানে, এ বছর আর পুজোর বাদ্যি বাজবে না বীরপাড়ার বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। পুজোর বর্ণ-গন্ধহীন ওই বাগানে এ বার শুধুই বিষণ্ণতার একঘেয়ে সুর।

রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর, কয়েক বছর মন্ত্রীরা বাগানে এসে পুজোয় শ্রমিকদের নতুন জামা কাপড় দিয়েছিলেন। গত দু’তিন বছর ধরে তাঁদের পুজো তো দূর অস্ত্, কোনও সময়ই বাগানে দেখা যায় না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। পুজোয় বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের জন্য সরকারের তরফে পনেরশো টাকা বোনাস ঘোষণা করা হলেও তা এখনও মেলেনি। তৃণমূলের বাগান কমিটির সম্পাদক বসন্ত তাঁতি বলেন, “পুজোর আগেই দু’চার দিনের মধ্যে শ্রমিকেরা বোনাসের টাকা পেয়ে যাবেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তাই এ বার আর পুজো করা সম্ভব হচ্ছে না।”

বাগান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বছর পঁচাত্তরের বুধুয়া মুন্ডা, বছর ষাটেকের কালিয়া লাকরারা দুর্গা পুজোর আয়োজন করে আসছেন। যখন যেমন অবস্থা গিয়েছে, তখন সে ভাবেই একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন পুজোর আনন্দ। কিন্তু গত বছরের মতো এ বারও বাগানে পুজো হবে না ভাবতেই শরীর হিম হয়ে আসে তাঁদের। ২০০২ সালে ঢেকলাপাড়া চা বাগান বন্ধ হয়। তার পর থেকে নতুন জামা-কাপড় না কিনতে পারলেও নিজরাই চাঁদা তুলে কোনও রকমে পুজো করে যাচ্ছিলেন। পুরনো ছেঁড়া কাপড়েই মণ্ডপের সামনে ধামসা, মাদল নিয়ে মেতে উঠতেন তাঁরা। মেতে উঠত শিশুরাও। আর্থিক অনটনে সেই পুজোয় ছেদ পড়ে গত বছর থেকে। পুরনো পুজো কমিটির প্রাক্তন কর্মকর্তা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সিকন্দর কুমারের গলায় একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে, “মন চাইলে কী হবে? পুজো করতে গেলে তো পয়সা চাই। বাগান বন্ধ। শ্রমিকেরা এমনিতেই আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছেন। এক-দু’জনের টাকায় পুজো করা কি সম্ভব?”

বৃদ্ধ বুধুয়া চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “শিশু বয়স থেকে বৃদ্ধ হলাম এই বাগানেই। বাগানে আর পুজো হবে না, এই দৃশ্য দেখার আগে মরে গেলেই শান্তি পেতাম।”

Tea Garden Durga Puja 2017
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy