Advertisement
E-Paper

জলপাইগুড়িতে বহিষ্কৃত নেত্রীও তৃণমূলের প্রচারে

তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের পরের দিনই জলপাইগুড়ির নেত্রী সাগরিকা সেন শহরে ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নেমে পড়লেন। বললেন, “আমার রক্তে তৃণমূল। জন্মলগ্ন থেকে দলে আছি। আমাকে বাইরে রাখবে এমন শক্তি কার…..’ বুধবার একদল অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে ঘাসফুল প্রতীকের সমর্থনে ওয়ার্ডে ঘুরে প্রচারের ফাঁকে বহিষ্কারের নোটিসের বিরুদ্ধে জেহাদ জারি রাখলেন সাগরিকা।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৫
জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে বহিষ্কৃত নেত্রীও। বুধবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে বহিষ্কৃত নেত্রীও। বুধবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের পরের দিনই জলপাইগুড়ির নেত্রী সাগরিকা সেন শহরে ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নেমে পড়লেন। বললেন, “আমার রক্তে তৃণমূল। জন্মলগ্ন থেকে দলে আছি। আমাকে বাইরে রাখবে এমন শক্তি কার…..’

বুধবার একদল অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে ঘাসফুল প্রতীকের সমর্থনে ওয়ার্ডে ঘুরে প্রচারের ফাঁকে বহিষ্কারের নোটিসের বিরুদ্ধে জেহাদ জারি রাখলেন সাগরিকা। পরনে হলুদ তাঁতের শাড়ি। পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ। কয়েকদিন আগে রাতের ঝড়ে উপরে পড়া লোহার খুঁটিতে হোঁচট খেয়ে নখ উপড়েছে। খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। হাতে ঘাসফুলের প্রতীক আঁকা বোর্ড। তিনি বললেন, “১০ এপ্রিল মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ নেত্রীরা প্রচারে আসছেন। ওই দিন মিছিলে থাকব।”

বিকেলের প্রচারে সাগরিকা দেবীর সঙ্গে ছিলেন মীনা বণিক এবং কৃষ্ণা দত্ত। প্রত্যেকের মুখে একই জেদ—‘ওঁরা কে আমাদের বহিষ্কার করার।’ কে বলবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ একগুচ্ছ অভিযোগ সামনে রেখে মাত্র বারো ঘণ্টা আগে গত মঙ্গলবার সিনিয়ার সিটিজেন পার্কে আয়োজিত সভায় ওই মহিলা নেত্রী ও কর্মী সহ সাত জনকে ছয় বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব! সঙ্গে ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও।

সাগরিকাদেবীদের বক্তব্য, দলকে রক্ষার জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবেন। তাঁর কথায়, “দল করতে এসে সংসার ভেসেছে। এখন বাপের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। কয়েকজন দলকে শেষ করবে এটা হতে দেব না। দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার প্রচারে আমরা আছি।” তা জানার পরে দলের জেলা সভাপতি সৌরভবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে যে কেউ প্রচারে সামিল হতে পারেন।’’

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাসফুল প্রার্থী জেলা তৃণমূল সভাপতির ঘনিষ্ঠ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিজিৎ সিংহর সমর্থনে বিকেলে প্রচারে নামেন সাগরিকা দেবী, মিনা দেবী, কৃষ্ণা দেবীরা। আবেদন একই, ‘উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূল প্রার্থীর পাশে দাঁড়ান।’ সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রীকে অনুগামীদের নিয়ে প্রচারে দেখে ওয়ার্ডের দলীয় কর্মীদের একাংশ অবাক। ‘কথা বললে যদি নেতারা কিছু মনে করেন’ সেই ভয় কাটিয়ে কাছে যাওয়ার সাহস জোটাতে পারেনি তাঁদের অনেকে।

বেলা গড়াতে ফিসফিসানি বেড়েছে। ফোনে ফোনে খবর পৌঁছেছে অনেক দূরে। অনেকে খোঁজ নিয়েছেন প্রচারে ঠিক কি বলছেন ওঁরা। বিষয়টি আঁচ করে এক সময় মিনা দেবী বলেন, “আমরা তৃণমূলে আছি। থাকব। আমাদের বার করে দেওয়ার ওঁরা কে! দেখছেন তো মানুষ কেমন সাড়া দিচ্ছেন।” ছবিটা আচমকা পাল্টে যায় সাগরিকা দেবীরা দেশবন্ধুনগর হাইস্কুলের সামনে রাস্তায় পৌঁছতে। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী বুথ অফিস থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে যান বহিষ্কৃত নেত্রীর কাছে। হাত জোর করে প্রার্থনা জানান, “দিদি দেখবেন।” নেত্রী প্রার্থীর হাত ধরে বলেন, “তুই আমার ভাই। তোর মতো প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে আমাদের লড়াই থাকবে।” বহিষ্কার নিয়ে একটি কথাও তুললেন না দুজনের কেউ। পরে প্রার্থী অভিজিৎ বলেন, “দিদিদের উৎসাহ দেখে ভাল লাগছে।” কড়া শাস্তি উপেক্ষা করে বহিষ্কৃতরা দলের পতাকা কাঁধে নিয়ে ভোট প্রচার করছেন, তা মালবাজারে বসে জেনেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভবাবু।

সকালে একই ভাবে নিজের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার সারেন সাগরিকা দেবীরা। দুপুরে কিছু ক্ষণের জন্য বিশ্রাম। তখন কিছু নথিপত্র বার করে তিনি জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জেলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে সংগঠনের প্রদেশ কমিটির অন্যতম সম্পাদক।

নিজেই বহিষ্কারের প্রসঙ্গ তুলে হেসে বলেন, “আমাদের সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে যোগ দিয়ে বিভান্তি সৃষ্টি, ধারাবাহিক ভাবে গোলমাল পাকানো।” এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, কোন সমস্যার কথা জানতে চাওয়া কি দল বিরোধী কাজ? সাগরিকা দেবীর দাবি, “সাংসদের কার্যালয়ে কোন গোলমাল হয়নি। জেলা নেতৃত্বের একাংশ মিথ্যা রটিয়েছে আমরা নাকি প্রাচারে নেই। কী দেখছে মানুষ!” তিনি জানান, ভোট প্রচারের জন্য গত ২৯ মার্চ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ২০ জন মহিলাকে নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। ওই কমিটি প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Sagarika Sen jalpaiguri trinamool tmc municipal election Biswajoyoti Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy