Advertisement
E-Paper

অন্ধকার কাটেনি পরিবারে 

চাকরি মেলেনি। এক বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি পেনশন। জীবন বিমা থেকে পাওয়া টাকায় সংসার চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। একমনে স্মরণ করেন স্বামীকে। চোখ ছলছল করে ওঠে সবিতাদেবীর।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১
শোকার্ত: মৃত ধরণীবাবুর স্ত্রী। দিনহাটায়। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: মৃত ধরণীবাবুর স্ত্রী। দিনহাটায়। নিজস্ব চিত্র

চাকরি মেলেনি। এক বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি পেনশন। জীবন বিমা থেকে পাওয়া টাকায় সংসার চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। একমনে স্মরণ করেন স্বামীকে। চোখ ছলছল করে ওঠে সবিতাদেবীর। গলা বুজে আসে। বলেন, “হঠাৎ করে টাকার সমস্যা না হলে এতটা দুশ্চিন্তায় পড়তেন না আমার স্বামী। রাত থাকতেই উঠে ছুটতে হত না ব্যাঙ্কে, এটিএমে। তাহলে হয়ত আজও তিনি বেঁচে থাকতেন।”

দিনহাটার বলরামপুর রোডের কোয়ালিদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সবিতাদেবীর স্বামী ধরণীকান্ত ভৌমিক। গত বছরের ১৩ নভেম্বর দীর্ঘসময় টাকা তোলার জন্য এটিএমে লাইন দেওয়ার পর বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বছর ৫৬ র প্রৌঢ়। প্রথমে হাসপাতাল ও পরে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। ১৫ নভেম্বর সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ধরণীবাবু। দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিল সংসার। তাঁর মাস মাইনের টাকা দিয়েই চলত। তাঁর মৃত্যুর পরে গোটা সংসারে নেমে আসা বিষাদ এক বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবার।

ধরণীবাবুর ছবি হাতে নিয়ে স্নাতকোত্তরের ছাত্রী শ্রাবণী বলেন, “বাবা তো আমাকে দুহাত দিয়ে আগলে রাখতেন। কলেজে নিয়ে যাওয়া। নিয়ে আসা। পরীক্ষার দিনগুলিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। এখন আর কেউ দাঁড়িয়ে থাকে না।” চোখে জল আসে শ্রাবণীর। একটু থেমে বলেন, “এ বার স্নাতকোত্তরের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। বন্যায় ভেসে গিয়েছিল চারদিক। একটি পরীক্ষা দিতে পারিনি। বাবা থাকলে যেমন করেই হোক আমাকে নিয়ে যেতেন।’’

শ্রাবণীদের পড়াশোনার জন্য মৃত্যুর মাস তিনেক আগে কোয়ালিদহরে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে দিনহাটা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন ধরণীবাবু। সেই বাড়িতে অবশ্য এখন থাকেন না ওঁরা। আরেকটু কম পয়সায় বাবুপাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। সবিতাদেবী জানান, ধরনীবাবুর মৃত্যুর পরে অনেক নেতা, প্রশাসনের লোকজন তাঁদের বাড়ি গিয়েছিলেন। মাস খানেক পর থেকেই অবশ্য আর খোঁজ নেননি কেউ। জীবন বিমার কিছু টাকা সেই সময় তাঁরা পেয়ে যান। সেই টাকা দিয়েই চলতে থাকে সংসার। মাস দুয়েক আগে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পেয়েছেন। বলেন, “মাসে অন্তত দশ হাজার টাকা খরচ। ছেলে শৈবাল দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। মেয়ে এ বারে স্নাতকোত্তর দিল। কত কষ্টে আমরা চলছি বোঝাতে পারব না। অন্তত পেনশনটা চালু হলে ভাল হয়।”

শুধু ওই পরিবার নয়, নোটবন্দির পর টাকা তুলতে গিয়ে ভোর রাত থেকে টানা দশ ঘণ্টা ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দিনহাটারই গোসানিমারির বাসিন্দা ধনেশ্বর বর্মন। এরপরেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাজারে ছোট্ট একটি পানের দোকান ছিল তাঁর। সংসার চালাতে করতে হত দিনমজুরির কাজও। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার ছিল তাঁর। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে এই পরিবারেরও। ঘটনার পর শাসক দলের নেতা থেকে প্রশাসনের আধিকারিকরা দফায় দফায় গিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতেও। আশ্বাস পেয়েছিলেন অনেক। কিন্তু কোনও সাহায্য মেলেনি। ধনেশ্বরবাবুর বড় ছেলে প্রদীপ সিভিক ভলেন্টিয়ার। ছোট ছেলে কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে।

Demonetisation Death Money ATM Cashless
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy