Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সন্ধে ৬টা: কেউ নেই মূল গেট-এ

চিত্র এক: সন্ধে ছ’টা। ধীরে ধীরে আঁধার নামছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথ বা দু’নম্বর গেট কিন্তু সুনসান।

প্রতিবাদী: শ্রাবন্তী বসাক।

প্রতিবাদী: শ্রাবন্তী বসাক।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

চিত্র এক: সন্ধে ছ’টা। ধীরে ধীরে আঁধার নামছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথ বা দু’নম্বর গেট কিন্তু সুনসান। কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। দরজার পাশেই তাঁদের ঘর তালা বন্ধ। বড় লোহার গেট খোলা। বাইরে থেকে গাড়ি, অটো, মোটরবাইক, সাইকেল অবাধে ঢুকছে। ছাত্রীদের গা ঘেঁষে দুরন্ত গতিতে চলে যাচ্ছে সেই সব বাইক। আঁতকে উঠছেন তাঁরা।

চিত্র দুই: ‘ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ডে’ নিরাপত্তা বিভাগে তিন জন ঘরে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। বাইরে এক জন মোবাইলে ব্যস্ত। ক্যাম্পাসের কোথাও কোনও নিরাপত্তারক্ষীর দেখা নেই। ভানুভক্ত মঞ্চের পিছনের রাস্তায় বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে কিছু বহিরাগত। মাঝেমধ্যে ঠান্ডা পানীয়ের বোতল থেকে কিছু খাচ্ছেন তাঁরা।

চিত্র তিন: রসায়ন বিভাগের পিছনের মাঠ এবং লাগোয়া অংশ অন্ধকার। সেখানে মদের বোতল ছড়িয়ে রয়েছে। সিগারেটের ধোয়া, গাঁজার গন্ধে ভরপুর এলাকা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমনই ছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

মোটে ২৪ ঘণ্টা আগে ক্যাম্পাসে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী শ্রাবন্তী বসাক। ভরা সভায় সে কথা শুনে রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনি সেন প্রকারান্তরে দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপরে।

এখনও কি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে কোনও উদ্যোগ দেখা গিয়েছে? এখনও তো অভিযোগ, সন্ধ্যা নামতেই পাহারাদার কেউ থাকে না। অথচ তখনও গবেষণাগার, বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রী শিক্ষকরা রয়েছেন। প্রশাসনিক ভবনে কাজকর্ম চলছে। সাতটা, আটটা বা তারও পরে ফেরেন অনেকে। হস্টেলের ছাত্রীরা কোনও প্রয়োজনে বাইরে গেলে তাঁরাও ফেরেন। নিরাপত্তারক্ষী না-থাকায় তাঁরাও আতঙ্কে থাকেন।

এই পরিস্থিতিতে কী ভাবছে কলেজ কর্তৃপক্ষ? উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীরা নেই, এমন হওয়ার কথা নয়। আমিও কখনও সন্ধ্যার পর ঘুরে দেখি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

দু’নম্বর গেটে সাড়ে ছ’টা নাগাদ অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী সচিন চৌধুরী এলেন। তিনি জানান, দু’জন থাকার কথা। কিন্তু এ দিন তিনি একাই আছেন। কেউ না থাকায় টিফিন করতেও যেতে পারছিলেন না। সে জন্য নিরাপত্তা বিভাগে বিষয়টি বলতে গিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য তাঁর দায়িত্ব ছিল এক নম্বর গেটে। কর্মী নেই বলে তাকে দু’নম্বরে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের ছাত্র তীর্থঙ্কর মণ্ডল জানান, সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসের পরিবেশ এমনই থাকে। নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না। সিসিটিভি ক্যামেরা তো নেই-ই। মাস কয়েক আগে তিনি বাড়িতে গেলে হস্টেলে তাঁর ঘরের তালা ভেঙে চুরিও হয়েছে।

এর মধ্যেই ল’মোড় ঘেঁষা ছাত্রীদের সরোজিনী হস্টেল লাগোয়া মাঠে অন্ধকারে বসে আড্ডা চলছে। সাড়ে সাতটা নাগাদ কাজ সেরে ফেরার পথে শিক্ষকদের কয়েক জন জানান, ওই আড্ডায় বাধা দিলেই মারধর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের পাশে জাতীয় সড়ক। সেই গেটে পাহারা রয়েছে। কিন্তু, গেট দিনরাত কোলা। উল্টো দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে গা ঘেঁষে রয়েছে বসতি। সেখান থেকে চত্বরের মধ্যে দিয়েই জাতীয় সড়কে পারাপার হয় দিনরাত। ফলে, কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে, তা হিসেব রাখার উপায় নেই। সন্ধ্যার পরে সেই সুযোগে নানা এলাকার কিছু যুবক ঢুকে পড়ে আড্ডা জমায় বলে অভিযোগ। বিশাল চত্বরের অনেকটা জায়গায় রয়েছে চা বাগিচা, শালবন। একাধিক কালভার্ট। সেখানে আড়াল খুঁজে বসে যায় নানা ধরনের আসর।

দিনে তা-ও একটু কম। সন্ধ্যা নামলে নেশার আসরের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। তাই ছাত্রী, মহিলারা তো দূরের কথা, সাধারণ ছাত্ররাও ক্যাম্পাসের মধ্যে, বিশেষ করে রিসার্চ স্কলার হস্টেল, লাগোয়া চা বাগান এলাকা, স্টাফ কোয়ার্টারের যাতায়াতের রাস্তায় চলাফেরা করতে আতঙ্কে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Bengal University Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE