E-Paper

বছরকার রোশনাই পড়ে না আমার জীর্ণ ঘরে

বালুরঘাট স্টেশনের কাছে, বেলাইনের সিংহপাড়ায় বাড়ি। এক দিকে আবাসন প্রকল্পে পাওয়া কিছু টাকায় ভিত পর্যন্ত উঠে অর্ধসমাপ্ত কাঠামো, অন্য দিকে কোনও রকমে খাড়া করা দরজাহীন একটি টিনের ছাউনি।

অশোক সিংহ

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৭

বাঁশের কাঠামোয় খড়ের বাঁধন। তার উপরে চড়ছে মাটির পরত। কুমোরটুলির শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠছে প্রতিমা। ঠিক একই সময়ে কাশবনের ধার ঘেঁষে খাল-পুকুর থেকে প্রতিমা তৈরির সে মাটি জোগাড় করে কুমোরটুলিতে পৌঁছে দিতে হাড়ভাঙা খাটনি চলছে আমাদের। আমরা কুমোরটুলির মাটির জোগানদার। আমার মতো অনেকেই প্রতিমা তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কিন্তু পুজোর বছরকার রোশনাই পড়ে না আমাদের ঘরে।

বালুরঘাট স্টেশনের কাছে, বেলাইনের সিংহপাড়ায় বাড়ি। এক দিকে আবাসন প্রকল্পে পাওয়া কিছু টাকায় ভিত পর্যন্ত উঠে অর্ধসমাপ্ত কাঠামো, অন্য দিকে কোনও রকমে খাড়া করা দরজাহীন একটি টিনের ছাউনি। অনেক আগে রিকশা-ভ্যান নিয়ে মোট বইতাম। রেশনের মাল। ডিলারেরা গাড়ি কিনে ফেলল। কাজ গেল আমার। এখন প্রতিমা গড়ার কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের মাটি দিই বছরে টানা ছ’মাস। বাকি সময়ে এটা-ওটা করে কেটে যায়। আগে কম দামে পাওয়া যেত মাটি। এখন ট্রাক্টরে আসে। কিনে, সরবরাহ করি। কুমোরটুলিতে মাটি দিলে ২০০ টাকা ভ্যানপিছু পাই। স্ত্রী লোকের বাড়ি কাজ করে। ‘লক্ষীর ভান্ডার’ পায়। কোনও রকমে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এক মাত্র ছেলে গোয়ায় পরিযায়ী-শ্রমিক। কিছু টাকা ছেলে পাঠায় ঠিকই, কিন্তু তারও একটা বড় অংশ রোগ-বালাইয়েই খায়। মাটির দাম বাড়ছে। কুমোরপাড়ার অনেকেই ট্রাক্টরওয়ালার সঙ্গে চুক্তি করে সরাসরি মাটি নিয়ে নেন। জানি না, কত দিন এ কাজটাও থাকবে! লোকে পুজোর দিনে নতুন জামাকাপড় পরে। আনন্দ করে। সে আনন্দ আমাদের ঘরে আসে কই!

(মাটির জোগানদার)

অনুলিখন: শান্তশ্রী মজুমদার

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2023

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy