ভোট মিটেছে, কিন্তু তৃণমূলের কোচবিহার জেলা দলের ‘ক্যাপ্টেনের’ রক্তচাপের ওঠানামাটা স্বাভাবিক হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি আবহাওয়ার মতো বারেবারে বদলে যাচ্ছে। কখনও একশো ষাট এবং আটষট্টি হয়ে যাচ্ছে, কখনও আবার দাঁড়াচ্ছে একশো এবং পঞ্চাশে। এক চিকিৎসকের কথায়, রক্তচাপের এমন ওঠানামা সাধারণভাবে চাপা টেনশনের জের হতে পারে।
দল সূত্রের খবর, তৃণমূলের জেলা ‘ক্যাপ্টেন’ অর্থাৎ কোচবিহারের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ভোটের ফলাফলের হিসাব নিকেশ নিয়ে দফায় দফায় অঞ্চল থেকে বুথ ভিত্তিক রিপোর্ট নিয়েছেন। তাতে সব এলাকার কর্মীরাই ‘লিড’য়ের কথাও বলেছেন। কারও মতে তিনি এ বার সব মিলিয়ে কুড়ি হাজারেরও বেশি ভোটে জিতবেন। কিন্তু বাস্তবে ওই হিসেব কতটা মিলবে, তা নিয়েই খানিকটা টেনশনে তিনি।
ক্যাপ্টেন নিজে অবশ্য এত বড় ব্যবধান নিয়ে অঞ্চল নেতাদের রিপোর্টে পুরোপুরি আশ্বস্ত নন। হাজার হোক এ বার পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটের মতো ফুরফুরে মেজাজে দাপিয়ে ভোট করানো যায়নি। ভোটের দিন মেজাজ হারিয়ে কখনও নিজের নির্বাচন কেন্দ্র নাটাবাড়িতে নির্বাচন কর্মীদের, কখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের শাসিয়েছেন। দলের এক কর্মীকে তিনি চড়ও মারেন। এ সব নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।
ভোটের পরেও অবস্থা তেমন বদলায়নি। দলের কর্মীদের কাছ থেকে জনে জনে ‘খবর’ জানতে চাওয়ার সময় ফোনে চেঁচিয়ে উঠেছেন, ‘‘অঞ্চল পিছু পঞ্চাশটা করে ভোটের লিড দিতে পারবি তো?’’ সেক্ষেত্রে ১৬টি অঞ্চল মিলিয়ে তৈরি ওই বিধানসভায় লিড দাঁড়াচ্ছে ৮০০ ভোটের।
এমন টানাপোড়েনে কার রক্তচাপের ওঠানামা স্বাভাবিক থাকবে? দলেরই এক নেতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটে অঞ্চল প্রতি ৫০ ভোটের লিড নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা মানেই বুঝতে হবে কাঁটে কা টক্কর!’’
কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আর সে জন্য হিসেবের বাইরে গিয়ে এলাকাগত ভাবে পরিচিতদের কাছেও রোজ খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। কেমন ভোট হয়েছে, মানুষ কী বলছেন, উন্নয়নের প্রসঙ্গ থেকে বাসিন্দাদের ক্ষোভ নিয়ে এলাকায় কী আলোচনা হচ্ছে, এ সব হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন নিজের মতো করে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে নাটাবাড়িতে বিজেপি ৩৫ হাজার ভোট পেয়েছিল। সেই ভোট নিজের পালে টানার চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে, তা-ও ভাবাচ্ছে তাঁকে। চিন্তা বাড়িয়েছে ভিন রাজ্যে কাজের প্রয়োজনে থাকা অন্তত এক হাজার লোক ভোট দিতে আসেননি বলে দলের আভ্যন্তরীণ রিপোর্টেও। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, “বাইরের ওই ভোটাররা আমাদের জেনুইন ভোটার ছিলেন। তবে রাজ্য ও এলাকার উন্নয়নের নিরিখেই এবার ভোট হয়েছে। ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে আমিই জিতছি।”
তবু মানসিক ‘চাপ’ যেন কাটছে না। তাই বাড়িতে সময় দিচ্ছেন। টিভির সিরিয়াল থেকে আট মাসের নাতি ঋষিকে নিয়েও মেতে থাকছেন। মনে মনে ১৯ মে’র কাউন্ট ডাউনও করছেন। কী হবে ? কী মনে করছেন? বিরোধীদের অবশ্য দাবি, ভোটের দিনের শরীরে ভাষাতেই স্পষ্ট রবিবাবু চাপে পড়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy