Advertisement
E-Paper

তাজামুলের জন্য মাথা হেঁট তৃণমূল নেতাদেরই

এলাকায় বদরাগী বলে পরিচিতি ছিলই! দু’বছর আগে শাসক দলের ছত্রছায়ায় আসার পরে দাপট আরও বেড়ে গিয়েছিল। আর কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করার পর সংস্কৃতি সম্পাদকের পদ পেয়ে কার্যত লাগাম ছাড়া হয়ে উঠেছিলেন তাজামুল হক। সামসি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মত এননই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৩:৩৫
সামসি কলেজে পুলিশি প্রহরা। ছবি: বাপি মজুমদার।

সামসি কলেজে পুলিশি প্রহরা। ছবি: বাপি মজুমদার।

এলাকায় বদরাগী বলে পরিচিতি ছিলই! দু’বছর আগে শাসক দলের ছত্রছায়ায় আসার পরে দাপট আরও বেড়ে গিয়েছিল। আর কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করার পর সংস্কৃতি সম্পাদকের পদ পেয়ে কার্যত লাগাম ছাড়া হয়ে উঠেছিলেন তাজামুল হক। সামসি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মত এননই।

মালদহের সামসি কলেজে পরীক্ষা হলে ঢুকে বুধবার তাজামুল যে ভাবে দুই শিক্ষিকা সহ শিক্ষকদের হুমকি ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে সংগঠনেরই মুখ পুড়েছে বলে টিএমসিপির একাংশেই ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কেন তাজামুলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। সংস্কৃতি সম্পাদক হওয়ার পরে তাজামুল যে ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন, তাতে তাঁকে একাধিকবার সতর্কও করা হয়েছিল বলে টিএমসিপি সূত্রেই জানা গিয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে সংগঠনের কোনও নেতাই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, বুধবার বারমুডা ও টি শার্ট গায়ে মদ্যপ হয়ে সঙ্গীদের নিয়ে পরীক্ষাহলে ঢুকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন তাজামূল। তিনি ওই কলেজেরই বিএ দ্বিতীয় বর্ষের পাশ কোর্সের ছাত্র। সামসি কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজের ছাত্ররা। সামসি কলেজের আসন পড়েছিল গাজল কলেজে। বুধবার তাজামুলের পরীক্ষা না থাকায় নিজের কলেজে ঢুকে তিনি ‘দাদাগিরি করছিলেন’ বলে অভিযোগ। তখন দুই শিক্ষিকা তাঁকে কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। সেই সময়েই ওই দুই শিক্ষিকাকে তিনি রেপ করিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। তাঁদের ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে প্রাণে মারারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ। শিক্ষকরা ছুটে এসে বাধা দিলে তাঁদেরও তাজামুলের হুমকির মুখে পড়তে হয়। টিএমসিপির রতুয়া-১ ব্লক সভাপতি আব্দুস সামাদ অবশ্য বলেন, ‘‘দুই শিক্ষিকার সঙ্গে একটা তর্কাতর্কি হয়েছিল। এমন কোনও বড় ঘটনা কিছু হয়নি।’’

যদিও টিএসিপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হওয়ার পর রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন তাজামূল। হামেশাই মদ খেয়ে কলেজে গিয়ে হম্বিতম্বি করতেন। শিক্ষকরা তো বটেই, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও তাঁর হম্বিতম্বির হাত থেকে রেহাই পেতেন না। কিন্তু শাসকদলের ছায়ায় থাকায় তাঁরা কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। তার আচরণ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সংগঠনের অন্যদের কাছে বিষয়টি দেখার কথাও বলেছিলেন। তাই দু’সপ্তাহ আগে সংগঠনের সভায় তাজামুলকে ডেকে রীতিমতো ভর্ত্সনাও করা হয়। মদ খেয়ে যেন আর সে কলেজে না যায়, সে কথা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর আচরণ পাল্টায়নি। বুধবারের ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি অশিক্ষক কর্মীরাও জোট বেঁধে রুখে দাঁড়ানোয় পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

কিন্তু কী ভাবে কার মদতে এত বোপরোয়া হয়ে উঠল তাজামুল? সংগঠনের পাশাপাশি স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাজামূল সংঘঠনের কারও পরোয়া করতেন না। তিনি ছিলেন, একাই একশো। সংগঠনের ছেলেদের সঙ্গে তাজামুলের খুব একটা ঘনিষ্ঠতাও ছিল না। বরং এলাকার এমন অনেকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল, যাঁরা অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। তাঁদের মতে, সেটাই ছিল তাঁর বেপরোয়া হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ। কলেজে নির্বাচনের পর গায়ের জোরেই তাজামুল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু একাংশের বাধায় তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি।

রতুয়ার ভগবানপুরে বাড়ি তাজামুলের। তাঁর চার দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে-ও বছর দেড়েক আগে বিয়ে করেছে। মাস পাঁচেকের শিশু সন্তানও রয়েছে তাঁর। বাবা লুত্ফুর রহমান পেশায় চাষি। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে ভালোই। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে। ওর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’’ আর তাজামুলের দাবি, শিক্ষিকারা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন বলায় কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তাঁর বদনাম করতেই ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে।

যদিও টিএমসিপির ব্লক কমিটির এক নেতা বলেছেন, যা ঘটেছে তা প্রকাশ্যেই অনেকের সামনে ঘটেছে। তারপরেও পরীক্ষা শেষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকে দুই শিক্ষিকাকে ডেকে নিয়ে এসে বিচার করতে হবে বলে তাজামুল যে ভাবে হুমকি দিয়েছে, তা সিসিটিভির ফুটেজেই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সব দেখে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। ওর একার জন্য গোটা সংগঠনের বদনাম হয়ে গেল।’’

trinamool tmc tajamul rape police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy