Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
তুষারের বাড়িেত ক্ষোভের মুখে তৃণমূল

মায়ের কান্নায় নীরব নেতারা

একদিকে সন্তান হারানো মায়ের মায়ের আকুল কান্না। অন্যদিকে, নানা প্রশ্নে পরিবারের বাকি সদস্যদের যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেওয়া।

সান্ত্বনা: তুষার বর্মণের মায়ের কাছে তৃণমূল নেতারা। ছবি: নারায়ণ দে

সান্ত্বনা: তুষার বর্মণের মায়ের কাছে তৃণমূল নেতারা। ছবি: নারায়ণ দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:১২
Share: Save:

একদিকে সন্তান হারানো মায়ের মায়ের আকুল কান্না। অন্যদিকে, নানা প্রশ্নে পরিবারের বাকি সদস্যদের যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেওয়া। এই দুইয়ের জেরে ঘটনার ন’দিনের মাথায় নিহত দলীয় কর্মী তুষার বর্মণের বাড়িতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হল তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বকে।

বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ এলাকায় পৌঁছন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা। তার আগেই অবশ্য তপসিখাতা বাজারে দলের পার্টি অফিসে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার ১ ব্লক সভাপতি মনোরঞ্জন দে-রা। তপসিখাতা বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে তুষারের বাড়ি পৌঁছন তাঁরা। তাঁদের পিছনে ঝান্ডা হাতে বাড়ির কাছ পর্যন্ত পৌঁছন দলের প্রচুর কর্মী-সমর্থকেরাও।

বাড়িতে পৌঁছে নেতারা প্রথমে উঠোনে থাকা চেয়ারে বসে তুষারের জ্যাঠামশাই অরুণচন্দ্র বর্মণের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানেই অরুণবাবু প্রশ্ন তোলেন, “সামান্য ভ্যানচালকের ছেলে হয়েও শম্ভুর এত সম্পত্তি হল কী করে? শম্ভুরা যে দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করছে, তা মনোরঞ্জন-সহ দলের নেতাদের বারবার বলা সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যবস্থা হয়নি?” একইসঙ্গে নেতাদের তিনি বলেন, “শম্ভুদের গ্রেফতারের পর আবার কিন্তু তাদের মাথার উপরে হাত দিয়ে রাখা চলবে না।” মোহনবাবু আশ্বাস দেন, “তুষার খুনে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যাপারে দল সাধ্যমত চেষ্টা চালাবে।”

এরপরই মোহনবাবুরা ঘরের ভিতরে তুষারের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন অঝোরে কাঁদতে কাঁদতেই নেতাদের কাছে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন পার্বতীদেবী৷ তৃণমূল সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে একটি মামলায় তুষারের নাম জড়ানোয় পার্বতীদেবী দলের নেতাদের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। এ দিন পার্বতীদেবী বলেন, “আপনাদের কাছে সন্তানের যা মূল্য, আমার কাছেও তাই। তাহলে সেদিন এতবার সন্তানের জন্য ভিক্ষা চাওয়ার পরও আজ কেন আমায় এ দিন দেখতে হল?” এর উত্তর মোহনবাবুরা দিতে পারেননি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোহন বলেন, “শম্ভুদের শোধরানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল।” একই কথা বলেন, মনোরঞ্জনবাবুও।

গত সপ্তাহে মঙ্গলবার তপসিখাতায় খুন হন তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ। অভিযোগ, জয় বাংলা হাটে অভিযুক্ত স্থানীয় পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শম্ভু রায়-সহ তার দলবল তুষারকে মারধর করে। তারপর শম্ভু রিভলভার বের করে তুষারকে গুলি করে খুন করে।

তুষার খুনের পরই গোটা এলাকায় জনরোষ ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে এলাকার তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের একাংশও অভিযোগ তোলেন, দলেরই একাংশ ওই নেতারা মাথার উপরে হাত রাখাতেই ভ্যান চালকের ছেলে শম্ভু এলাকায় ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে একের পর এক কুকীর্তি শুরু করে। এ দিন দলের নেতারা শম্ভুর বাড়ি গেলেও এলাকায় ক্ষোভ কমেনি। এ দিনও অনেকে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘শোধরাচ্ছে না দেখেও কেন শম্ভুদের বিরুদ্ধে দল আগে ব্যবস্থা নিল না? তাহলে তো তরতাজা প্রাণটা যেত না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE