Advertisement
E-Paper

ছবি ছেড়ার দিনে কাক-তর্কে কাকা

এক সময়ে ঘনিষ্ঠ কাকা-ভাইপোর মধ্যে এখন বিস্তর ব্যবধান, বলছেন তৃণমূলের লোকজনই। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে বিরোধীরা বহু জায়গায় সুবিধাও পেয়ে যাচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৮
বিতর্কে: এই হোর্ডিং ছেড়া ঘিরেই বেধেছে তরজা। নিজস্ব চিত্র

বিতর্কে: এই হোর্ডিং ছেড়া ঘিরেই বেধেছে তরজা। নিজস্ব চিত্র

কাকের উদাহরণ দিয়ে দিন শুরু করলেন ‘কাকা’। তার মধ্যেই উঠল হোর্ডিং ছেড়ার অভিযোগ। ‘কাকা’ বলেন, ‘‘যারা এ সব করছে, তারা বিরোধীদের হয়ে কাজ করছে।’’ আর তাঁর ‘ভাইপো’ বলেন, ‘‘এই ভাবে দলের হোর্ডিং-ফ্লেক্স ছিড়ে ফেলা অপরাধমূলক কাজ।’’

কাকা কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে তাঁর ভাইপো বলে পরিচিত কোচবিহারের যুব তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়।

এক সময়ে ঘনিষ্ঠ কাকা-ভাইপোর মধ্যে এখন বিস্তর ব্যবধান, বলছেন তৃণমূলের লোকজনই। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে বিরোধীরা বহু জায়গায় সুবিধাও পেয়ে যাচ্ছেন। রথযাত্রার আগে বিজেপিও বহু জায়গায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল বলে অনেকের দাবি। মঙ্গলবার যে শহরের সুনীতি রোড-সহ একাধিক জায়গায় তৃণমূলের হোর্ডিং ছেড়ার অভিযোগ উঠেছে, তা-ও এই দ্বন্দ্বের সুযোগে দুষ্কৃতীরা করেছে বলে দাবি দলেরই একাংশের।

আগামী ৮ জানুয়ারি দলের কোচবিহারের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে শহরে। তার প্রচারে যুব ও মূল তৃণমূলের তরফে পাল্লা দিয়ে পোস্টার, ব্যানার ও হোর্ডিং লাগানো হয়েছে। সোমবার রাতে শহরের সুনীতি রোড, তোর্সা সেতুর আশপাশের অঞ্চল, দিনহাটা রোডে লাগানো এমন বেশ কিছু হোর্ডিং ছিড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মূল তৃণমূলের দাবি, তাদের হোর্ডিংই বেশি ছেড়া হয়েছে। যদিও যুবর দাবি, তাদের হোর্ডিংও ছেড়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে যখন এমন অভিযোগ ওঠে, তার মধ্যেই রবীন্দ্রনাথবাবু ভাইপোকে নাম না করে ময়ূরপুচ্ছ কাক বলে উল্লেখ করে সাংবাদিক বৈঠক করেন। তাঁর উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরেই নায়েব আলি টেপু স্মরণ সমিতির নামে ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এক সময়ে ওই আয়োজনে সামিল ছিলেন পার্থবাবু। এ বারে আলাদা ভাবে ভাওয়াইয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে ভাওয়াইয়া অনুষ্ঠান নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “কাক ময়ূরপুচ্ছ লাগিয়ে নিলেই কি ময়ূর হয়? কাক কাকই থাকে। দু’দিন পরে ময়ূরপুচ্ছ ঝরে পড়বে। কাকের আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে।”

পার্থবাবু অবশ্য ওই বক্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “আব্বাস-নায়েব আলি-প্যারীমোহনের নামে ভাওয়াইয়া অনুষ্ঠান হয়েছে। তাতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। প্রচুর মানুষ অনুষ্ঠান শুনতে হাজির হন। একাধিক বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি যান অনুষ্ঠানে।”

কোচবিহার কাকা-ভাইপোর লড়াই চলছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। একসময় দু’জনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জেলা রাজনীতিতে যেমন আলোচিত ছিল, বর্তমানে তা ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁদের বিরোধের কথা। যুব ও মূল তৃণমূলের দ্বন্দ্বেও বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কোচবিহার। দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, কিছু দিন আগে সাংবাদিক বৈঠক করে রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছিলেন, আর ‘কাকা’ ডাক আর শুনতে চান না। কেউ যাতে তাঁকে ‘কাকা’ না ডাকে সে জন্য তিনি ‘হাতজোড়’ও করেন।

জেলায় দলের মূল ও যুব সংগঠন এবং তাদের দুই প্রধান নেতার মধ্যে যখন এমন দ্বন্দ্বের হাওয়া ঘুরছে, সেই আবহেই আসছেন অভিষেক। সেই সভার প্রচারেও দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথবাবুর নামে শহর জুড়ে হোর্ডিং টাঙানো হয়েছে। তাকে টেক্কা দিয়ে হোর্ডিং টাঙিয়েছে যুব তৃণমূল। সোমবার রাতে শহরের একাধিক জায়গায় হোর্ডিং ছিড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, “যারা এমন করেছে তারা তৃণমূলের কেউ নন। বিরোধীদের হয়ে কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানো হবে। যারা এমন করছে তাদের গ্রেফতার করার দাবি জানানো হবে।” পার্থবাবুও বলেন, “এটা অপরাধমূলক কাজ। যুব তৃণমূলেরই সংগঠন। তাই ওই সংগঠনের কেউ এমনটা করবেন না। তবে যারাই করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার দাবি জানাব।”

Cooch Behar Poster TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy